• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কিংফিশার রেস্টুরেন্টে বিদেশি মদ, মুক্তার ও ফারুক বিশ্বাসকে খুঁজছে গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২২, ০৭:০২ এএম

কিংফিশার রেস্টুরেন্টে বিদেশি মদ, মুক্তার ও ফারুক বিশ্বাসকে খুঁজছে গোয়েন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর উত্তরার থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধারের পর এর নেপথ্য কারিগরদের খুঁজছে গোয়েন্দারা। উত্তরায় কিংফিশার নামক রেস্টুরেন্টের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বার খুলে বিদেশি মদের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন মুক্তার হোসেন নামের এক ব্যক্তি।


গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুক্তারের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছেন ফারুক বিশ্বাস নামের সাবেক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মূলত এই কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন কিংফিশারের মালিক মুক্তার হোসেন। একের পর এক গড়ে তোলেন বিদেশি মদের বার। মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জে তার অন্তত পাঁচটি বার রয়েছে।


শুধু ফারুক বিশ্বাসই নয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গেও ওঠাবসা আছে এই মুক্তার হোসেনের। তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে মাদক ব্যবসা চালাতেন তিনি। অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওই বারে। সেখান থেকে তিনি মাসোহারা আদায় করতেন বলেও তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।


বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে উত্তরার-১৩ নম্বর সেক্টরের গরীবে নেওয়াজ রোডে একটি ভবনে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই ভবনে ‘কিংফিশার রেস্টুরেন্ট’ নাম দিয়ে মদের বার চালাতেন মুক্তার। অভিযানে বারটির ম্যানেজারসহ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই অভিযানে বারের মালিক মুক্তারকে গ্রেফতার করতে পারেনি ডিবি। মুক্তার বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মুক্তার এবং তার মদতদাতাদের শিগিগরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।


বৃহস্পতিবারের অভিযানে সেখান থেকে পাঁচ হাজার ৪০০ পিস বিয়ার এবং প্রায় ৬০০ বোতল নিষিদ্ধ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ উদ্ধার করা হয়। ওই বারে প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যাতায়াত ছিল। তাদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ডিবি প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে টনক নড়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরের অপরাধীদের। তিনি যেনো খুনি-সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের জমে পরিণত হয়েছেন। ঢাকা মহানগরীর অপরাধ দমনে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন এই চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা। উত্তরায় কিংফিশার রেস্টুরেন্ট ও বারে অভিযান ডিবির একটি বড় সাফল্য। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 


শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‍‍`আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল যে, উত্তরার ওই ভবনে গান-বাজনার নামে ছেলেমেয়েরা ডিজে পার্টি করছে। একইসঙ্গে সেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ মদ। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। প্রথমে ভবনের সাত তলায় গিয়ে ডিবির দল দেখে অনেক ছেলেমেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে ভেতরে গিয়ে দেখে সেখানে প্রচুর নিষিদ্ধ বিদেশি মদ ও বিয়ার। ডিবির দল ৫-৬ তলায় গিয়ে একই অবস্থা দেখতে পায়।‍‍`


হারুন অর রশীদ বলেন, ‍‍`অভিযানে পাওয়া ৫০০ দামি নিষিদ্ধ বিদেশি মদ ও প্রায় ছয় হাজার ক্যান বিয়ার কীভাবে দেশে আনা হয়েছে এ বিষয়ে কোনো তথ্যই জানাতে পারেনি বার কর্তৃপক্ষ। কাগজপত্র দেখতে ডিবি পুলিশ বাড়িটিতে রাত ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তারপরও তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এরপর বার থেকে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে।‍‍`


ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‍‍`ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অপরাধীদের ‍‍`ত্রাস‍‍` হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। যেখানে অপরাধের তথ্য পাবো সেখানেই অভিযান চালাবে গোয়েন্দা পুলিশ। অপরাধী যত শক্তিশালী হোক না কেনো, আইনের হাত তার চেয়েও বেশি লম্বা। অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।‍‍`


সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ১৪ বছর আগে ২০০৮ সালের দিকে রাজধানীর বারিধারায় ‘এভিনিউ’ নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন মো. মুক্তার হোসেন। এরপর গুলশানে ‘লেক ভিউ’ রেস্টুরেন্টেও ওয়েটার হিসেবে ছিলেন। সেই মুক্তার এখন শতকোটি টাকার মালিক। অবৈধ বার ও নিষিদ্ধ বিদেশি মদের ব্যবসা করে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।  তার যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি-বাড়ি আছে। সেখানে বসবাস করেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা।

এআরআই

আর্কাইভ