• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে হাসপাতাল-বাসাবাড়িতে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ১০:২৭ এএম

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে হাসপাতাল-বাসাবাড়িতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ার্ত সময় পার করছিল অপারেশন থিয়েটার আর আইসিইউ‍‍`র রোগীগুলো। নগরীর বহুতল ভবন এবং ছোট ছোট বসত বাড়িতে দেখা যায় লিফট  বন্ধ ও পানি সংকট।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর)  বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যুত বিভ্রাটের ফলে হাসপাতাগুলোর করুণ অবস্থা। ভর্তি থাকা রোগীরা নানামুখী ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি বিভাগের সমস্যা ছিল প্রকট। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ। আলোর জন্য লাইট না পেয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে অবস্থান করছিলেন কেউ কেউ। ভ্যাপসা গরম থেকে রক্ষার জন্য অনেকে হাতপাখা দিয়ে রোগীদের বাতাস করছিলেন। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।

বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, একান্তভাবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেনারেটর টানা ১২ ঘণ্টা চলবে, তারপর সম্ভব নয়।

বেশ কয়েকজন হাসপাতাল স্টাফ জানান, কোনো হাসপাতালেই পর্যাপ্ত ডিজেল রাখা হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পও বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ ছিল। ফলে পেট্রোল না মেলায় বহু হাসপাতালে জেনারেটরও চালানো সম্ভব হয়নি। এরই সাথে দেখা যায় চরম পানির সংকট। বিদ্যুৎ না থাকায় ট্যাংকিতে পানি তোলা বন্ধ থাকে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক জেনারেটরের মাধ্যমে চালিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়। এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ না এলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী-স্বজনরা বারান্দায় অবস্থান নেন। সাধারণ ওয়ার্ডগুলো একেবারেই অন্ধকার ছিল। কিছু হাসপাতাল ২ ঘণ্টা জেনারেটর চালিয়ে ২ ঘণ্টা বন্ধ করে আবারও চালু করে রোগীদের সহায়তা করছিল।

এ ছাড়া আবাসিক এলাকাতেও দেখা যায় বিদ্যুতের অভাব। পানি উত্তোলন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পানি সংকট চরমে উঠে। বিদ্যুৎহীনতার মধ্যে বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ না থাকার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। খাবার পানি থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, গোসল আর নিত্যকার কাজে সংকটের মধ্যে পড়েছেন তারা। লিফট বন্ধ থাকায় উঁচু ভবনে উঠানামায়ও কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন মানুষ।

 আজিমপুর কোয়ারটারের সরকারি চাকরিজীবী ড. আয়ুব আলী জানান, দুপুর ২টার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই সময় পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয় অজু করে নামাজে যেতে। মসজিদে পানির সংকট দেখা দেয় বিদ্যুৎ যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সাধারণ রান্নাবান্না, গোসল করার ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের।

সেগুনবাগিচার বেশ কয়েকটি উঁচু ভবনের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে সার্ভিস দেয়ার চেষ্টার পর আর সম্ভব হয়নি। তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন। সেখানেও যথাযথ তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। দুপুরের পর থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমান।

এ কারণে একটু স্বস্তি পেতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে হাতিরঝিল এলাকা। বিদ্যুৎবিহীন বাসাবাড়ি-ভবনে থাকা সাধারণ লোকজন ঝিলের পাড়ে অবস্থান নেন।হাতিরঝিল এলাকার আশপাশের বাসিন্দাবাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে হাতিরঝিলে অবস্থান নেন-একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য।

 

এসএএস/এএল

আর্কাইভ