প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০৭:৪৫ পিএম
গত কয়েক দিন ধরেই অসহনীয় যানজটের কবলে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক। একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা ও রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত এই চিত্র দেখা যায়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের। আজ ভোরে রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে। আর এ বৃষ্টি রাজধানীবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় সকাল থেকেই স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার (২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রায় থামকে ছিল বিমানবন্দর সড়ক। ঢাকার ভেতরে ঢোকা এবং বের হয়ে যাওয়ার দুই পথেই তীব্র যানজট। নড়ছিল না কোনো যান। সেই সঙ্গে সড়কের মোড়গুলোতে ছিল কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড়। যানজটের কারণে বাসে উঠছেন না কাজে বের হওয়া মানুষ, আবার যারা বাসে করে যাচ্ছিলেন যানজট তীব্র হওয়ায় তারাও বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করছেন। ফলে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বিশ্বরোড, বনানী, কুড়িল প্রগতি স্বরণিজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। অন্যদিকে বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, কাওলা, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর পেরিয়ে গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানবন্দর সড়ক বলতে গেলে প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। আসা-যাওয়া দুই দিকেই যান চলাচল থেমে আছে। উন্নয়নকাজ চলমান থাকা ও সড়কের বেহাল দশার কারণে এমনটা হচ্ছে। তার ওপর বৃষ্টির পানি গর্তে জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তাই যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যা দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করছে। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে অফিসগামী মানুষের ভিড়। মূলত আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে বনানী পর্যন্ত আবার বনানী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের দুই অংশজুড়েই তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ট্রাফিক বিভাগ দ্রুত এ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে।’
জানা যায়, বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট ছিল। ফলে কাজে বের হওয়া মানুষ গণপরিবহন না পেয়ে ছাতা মাথায় রাস্তায় অপেক্ষায় ছিল। রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে থাকার কারণেও অন্যান্য যানবাহনে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যার প্রভাব পড়ে যানজটে। এর মধ্যে বিমানবন্দরের মতো একটি ব্যস্ত সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়ায় তা পুরো শহরেই ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি।
উত্তরা থেকে গুলশান এসে প্রতিদিন অফিস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী আল আমিন প্রান্ত। তিনি বলেন, ‘৯টায় আমার অফিস শুরু হয়। আমি ৮টায় বাইক নিয়ে বের হই। কিন্তু বিমানবন্দরের সামনে এসে যানজটে আটকা পড়ি। বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। প্রায় ৩০ মিনিট বসে ছিলাম। পরে এক গিয়ারে বাইক চালিয়ে বনানী আসি। ততক্ষণে দুই ঘন্টা পার হয়ে যায়।
উত্তরা থেকে মহাখালী আসতেছিলেন মিরাজ হাওলাদার নামক আরেকজন। তিনি বলেন, ‘১০ টায় আমার অফিস শুরু হয়। সে হিসেবে আমি সাড়ে ৮টায় বাসে উঠি। বাস বিমানবন্দরে এসে যানজটে আটকা পড়ে। টানা ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর হাঁটা শুরু করি। কিন্তু ফুটপাথে মানুষের ব্যাপক চাপ। এ জন্য ঠিক মতো হাঁটাও সম্ভব হয়নি। সীমাহীন ভোগান্তির পর আমি ১১টার দিকে অফিসে ঢুকি।’
ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাবলিক গ্রুপ ট্রাফিক এলার্টে বিভিন্ন পোস্ট করছেন অনেকেই।
এদের মধ্যে সাইদুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘অভিভাবকহীন বিমানবন্দর সড়কে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। একদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অন্যদিকে বৃষ্টি সব মিলে সকাল থেকে স্থবির বিমানবন্দর সড়ক। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।’
বিমানবন্দর সড়কে তারিক নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এয়ারপোর্টে সড়ক পুরোটাই অচল হয়ে আছে। কোনো গাড়ি নড়ছে না। হাজার হাজার অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ২-৩ ঘণ্টা লাগছে এ সড়ক পাড়ি দিতে। যারা অফিসের জন্য সকালে বের হয়েছেন তারা কেউই যথা সময়ে অফিস পৌঁছাতে পারেননি।’
এ সড়কে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকা বিকাশ পরিবাহনের বাসের চালক জুনায়েদ বলেন, আব্দুল্লাহপুর থেকে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যা হাউজবিল্ডিং হয়ে আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, জসিম উদ্দিন, এয়ারপোর্ট, কাওলা, খিলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সড়ক পার হতে কম পক্ষে দুই তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। বলতে গেলে পুরো সড়কই থেমে আছে। আজিমপুর পৌঁছাতে হয়তো সন্ধ্যা হবে।
এআরআই