• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

ইটভাটায় সবুজের সমারোহ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২১, ০৯:৪৭ পিএম

ইটভাটায় সবুজের সমারোহ

দেশজুড়ে ডেস্ক

ইটভাটা মানেই কালো ধোঁয়া। চারপাশের গাছগুলো পাতা শূন্য। দাঁড়িয়ে আছে গাছ কঙ্কাল হয়ে, কিন্তু এখন এমনটি আর নেই। গাজীপুরের অধিকাংশ ইটভাটাই এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। মাইল মাইল শুধু সবুজ আর সবুজ। মৃত ইটভাটাগুলোয় এখন প্রাণের স্পন্দন। সেখানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মৌসুমি শাক-সবজি। এখন আর মাটি পোড়ানো হয় না। আকাশে উড়ে না কালো ধোঁয়া। সুস্থ নিঃশ্বাসে প্রাণ পেয়েছে ইটভাটা এলাকার মানুষ।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সরকারি অনুমোদন অথবা বিনা অনুমোদনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠে শত শত ইটভাটা। পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা পরিচালনা করছিল ইটভাটা মালিকরা। সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে ২০১৩ সালে গাজীপুরের সকল ইটভাটা সরিয়ে নিতে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু ভাটা মালিকরা স্থাপনা না সরিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধভাবে ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।

২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। সে অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতর গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৬৬টি অবৈধ ভাটা বন্ধ করে দেয়।

দীর্ঘ ৩০ বছর পর কালো ধোঁয়া থেকে নিস্তার পায় গাজীপুর এলাকাবাসী। ভাটার কারণে যেসব এলাকায় স্বাভাবিক ফসল উৎপাদন ছিল না সেখানে এখন ফসলের সমারোহ।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের মাঠে মাঠে লাগানো হয়েছে ধান ও শাক সবজি। মাঠের পর মাঠ ভরে উঠেছে সবুজে। পরিত্যক্ত ভাটাগুলোয় চাষ হচ্ছে বিভিন্ন মৌসুমি শাক-সবজি। পাখির কোলাহল ও সবুজের আবরণে এ এক ভিন্ন পরিবেশের আবির্ভাব। স্বস্তি ফিরেছে এলাকাবাসীর মনে।

গাজীপুরের কাউলতিয়া কারখানা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, ২০-২৫ বছর আগে এ এলাকায় প্রচুর শাক-সবজি ও ফসল আবাদ হত। কিন্তু ইটভাটার কারণে সকল ধরনের কৃষি আবাদ বন্ধ হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, 'কালো ধোঁয়ায় গাছের ফল নষ্ট হয়ে যেত। ধুলাবালি ও ধোঁয়ার দূষণে পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হত। অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হত এলাকাবাসী।'

বাইমাইল এলাকার বাসিন্দা শাজাহান সাজু বলেন, আগে ঘরের ভেতর, ছাদের ওপর ও উঠানে ইট ভাটার কালো ছাই পড়ে থাকত। গাছে ও জমিতে ফসল হতো না। 

তিনি বলেন, 'এবার ইটভাটা না থাকায় বাসা-বাড়িতে এসব আর নেই। দূষণ মুক্ত, সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে দেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা দূষণমুক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকতে চাই।'

একই এলাকার বাসিন্দা মমিনুল ইসলাম জানান, ইটভাটা বন্ধ থাকায় এবার তার জমি আর ভাটা মালিকের কাছে ভাড়া দেননি। এখন এসব জমি চাষাবাদ করে গম, সর্ষে এবং অন্যান্য শীতকালীন সবজি আবাদ করেছেন। পরিবেশ সুন্দর এবং দূষণমুক্ত থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো.আব্দুস সালাম সরকার বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখা ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইটভাটা বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা চলমান রয়েছে। চলতি বছর জেলার বিভিন্ন ইট ভাটায় ৩২টি অভিযান পরিচালনা করে দুই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিটি এলাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল ইটভাটার কার্যক্রম।

দূষণমুক্ত, আধুনিক, পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য শহর করতে কাজ হচ্ছে উল্লেখ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমরা ইটভাটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। নাগরিকদের সমস্যা হয় এমন কিছু নগরে হতে দেয়া হবে না।
আর্কাইভ