• ঢাকা বুধবার
    ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ডিস মালিকের নির্দেশে রানাকে খুন করেন তারেক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ০৯:৫৯ পিএম

ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ডিস মালিকের নির্দেশে রানাকে খুন করেন তারেক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর রমনা থানার মগবাজার এলাকার বাটার গলির মুখে ২০১৪ সালে থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি এবং রমনা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহবুবুর রহমান ওরফে রানাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর ঘাতক মো. ইকবাল হোসেন তারেক (৩৮) গ্রেফতার এড়াতে যশোর, চাঁদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাম পরিচয় বদলে তারেক নামে আত্মগোপন করে ছিলো। এই সময়ে পরিবহন শ্রমিক ও গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত কার্টুন ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে আসছিল তারেক।

অবশেষে দীর্ঘ ৯ বছর আত্মগোপনে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হলেন আলোচিত হত্যা মামলার আসামি মো. ইকবাল হোসেন তারেক। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, রমনা থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি এবং রমনা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহবুবুর রহমান ওরফে রানাকে কুপিয়ে হত্যার অন্যতম পলাতক আসামি মো. ইকবাল হোসেন তারেককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতার তারেক পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

গ্রেফতারকৃত আসামি তারেককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, রমনার সুইফ কেবল লিমিটেড নামের ডিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিল কামরুল ইসলাম ও তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সঙ্গে নিহত মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। এই বিরোধ নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ডিসের কেবল কেটে দিত এবং উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। এই ঘটনার জের ধরে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাহবুবুর রহমান রানা মোটরসাইকেল করে মগবাজার বাটার গলির মুখে আসার সঙ্গে সঙ্গে গতি রোধ করে রানার মুখে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারেক ও তার সঙ্গে থাকা ঘাতকেরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি তাজা বোমা ও রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করে। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনায় সুইফ কেবলের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের জুন মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন গ্রেফতার ও চারজন পলাতক ছিল। পলাতক আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত ইকবাল হোসেন তারেক (৩৮) অন্যতম। তারেকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিলো।

২০০৯ সালে যশোরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় আসেন তারেক। স্কুল জীবন থেকে মাদক আসক্ত ছিলো। বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। ২০০৭ সালে বিয়ে করেন। তাঁর একটি ছেলে রয়েছে। ২০১১ সাল থেকে হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি তৎকালীন সুইফ কেবলে চাকরি করত। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় তিনি গাঁজা ছেড়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন এবং চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি মাদকসহ রমনা থানা-পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। নিজেকে মো. ইকবাল হোসেন ওরফে তারেক (৩৩) বাবা মো. নুরুল ইসলাম পরিচয় দেয়। তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধরিয়ে দেওয়ায় রানা গ্রুপের লোকজনের হাত থাকা ক্ষোভ তৈরি হয়। এই ক্ষোভ এবং ডিশ মালিকের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।

ত্যাকাণ্ডের পর চাঁদপুরে গিয়ে কৃষিকাজ শুরু করে। এই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় যশোর গিয়ে মাদক ব্যবসা শুরু করে। তারপর ২০১৯ সালে ঢাকায় এসে বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টুন সংগ্রহ করে বিক্রির আড়ালে মাদক ব্যবসা শুরু করে। সে একাধিকবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু গ্রেপ্তারের সময়ে নিজেকে তাহের, বাবা আব্দুর রহিম হিসেবে পরিচয় দেয়। ফলে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও হত্যা মামলায় গ্রেফতার থেকে রক্ষা পেয়ে যেত। ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করত। সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর র‍্যাবের গোয়েন্দা দলের জালে তিনি ধরা পড়ে। তাঁর নামে হত্যা ও মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

জেডআই/

আর্কাইভ