প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, ১২:২৬ এএম
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তে এখনই সেনা মোতায়েন নিয়ে সরকার কিছু ভাবছে না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দেশের সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে সরকার। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।’
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব এবং দেশের এজেন্সিগুলোকে নিয়ে বৈঠকের পর বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
সাংবাদিকরা ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের কাছে জানতে চান সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সীমান্তে সেনা মোতায়েনের কথা ভাবছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে সরকার ভাবছে না।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আজ আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না হয় এবং আমরা এটাও বলেছি, এটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আপনারা কীভাবে সমাধান করবেন, সেটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে। কিন্তু মিয়ানমারের গোলা যেন আমাদের ভূখণ্ডে না আসে। সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না, তাদের।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল শান্তিকামী রাষ্ট্র। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে অনেক দিন ধরে এসব সহ্য করে যাচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের সমস্যা সমাধান করুন, যাতে করে আমাদের এখানে কোনো রক্তারক্তি না হয়, কোনো প্রাণ না যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ একটি উচ্চ পর্যায়ের মিটিং করেছি সবাইকে নিয়ে। বাংলাদেশের যত এজেন্সি আছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং আমরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে বলে দিয়েছি, বর্ডারে সজাগ থাকতে। রি-এনফোর্সমেন্ট যেখানে যতটুকু লাগে, করবে। সাগর দিয়ে বা অন্য জায়গা দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেছি। তবে আমাদের দেশেরও কিছু লোক আছে, তারা আগের বার জড়িত ছিল, সেটা যেন এবার না হয়। এবার আমরা আমাদের যত এজেন্সি আছে সবাইকে রিকুয়েস্ট করেছি।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আপনারা হয়তো বলবেন, বারবার আপনারা প্রতিবাদলিপি দেন, কিন্তু কিছু হয় না; এটাতে আমাদের করার কিছু নেই। কারণ আমরা তো দায়িত্বশীল একটি রাষ্ট্র। সে হিসেবে প্রতিবেশীকে যা করা যায়, নিয়মমাফিক তা আমরা করছি। আমাদের কথাবার্তায় কোনো রকম দুর্বলতা বা অনেকে নতজানু বলে থাকে সে ধরনের কোনো কথাই নেই। আমরা শক্ত অবস্থান থেকে তাদের বলেছি।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের জবাব কী ছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত যেটা বলেছেন, তথ্যগুলো তিনি নেপিদোতে জানাবেন তাদের কর্তৃপক্ষকে, তারা যেন এর ওপর কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে। রাষ্ট্রদূত সময় দিয়েই শুনেছেন। মর্টারশেল ও গোলাগুলি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের একটি বক্তব্য আছে, এগুলো হয়তো আরাকান আর্মির গোলাগুলিতে হতে পারে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আপনাদের দেশের ভেতর থেকে যা কিছু আসুক না কেন, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। সেটা আপনারা দেখবেন। আমাদের এখানে যাতে কিছু না আসে, সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন। এটা করার জন্য যা কিছু করার দরকার আপনারা পদক্ষেপ নেবেন।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘চারবার তাদের কাছ থেকে উত্তর এসেছে। তারা গতানুগতিক উত্তর দিয়েছে। এটা আমাদের এখান থেকে হয়নি আরাকান আর্মি করছে। আমরা পাঁচ বছর ধরে জাতিসংঘসহ এমন কোনো জায়গা নেই, এমন কোনো বড় কোনো দেশ নেই যাদের কাছে আমরা যাইনি, ধরনা দিইনি। সমস্যার সমাধান হয়েছে? ইউএনএইচসিআর কি পারছে? কাজেই দ্বিপাক্ষিক ইস্যু সমাধানে সময় লাগবে। ধৈর্য ধরতে হবে। তবে আমরা যদি নিজেরা নিজেদের মধ্যে শক্ত থাকি সমাধান আসবে।’
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গোলাগুলি চলে। রাত ৮টার দিকে একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার ভূখণ্ড থেকে ছোড়া একটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় এসে পড়ে। এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তার আগে, ২৮ আগস্ট বিকেলের দিকে মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রুতে এসে পড়ে।
এআরআই