• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেবে ভারত: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ০৩:৩০ এএম

রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেবে ভারত: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো সব পণ্যের রফতানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেবে ভারত। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নেবে। ভারত সফর নিয়ে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক সেটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে সেটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত সে জন্য আমাদের সংবিধান তো আমরা বন্ধ করে রাখতে পারি না। সংবিধানের ধারা অনুযায়ী দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।’

শেখ হাসিনা বলেন, আগামীর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে করবে না এককভাবে করবে তা সময়ই বলে দেবে। আমরা ১৪ দল করে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করেছে, তবে, আমাদের সঙ্গে সমঝোতায় ছিল। কিন্তু, ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে তাতো সময়ই বলে দেবে। আর আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে, এর দরজা খোলা।

তিনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এত কাজ করার পর জনগণ নিশ্চই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, সেটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চান, না চাইলে তো কিছু করার নেই। সেটা জনগণের ইচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে যারা সব সময় আমাদের সঙ্গে ছিল তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে এতে কোনো আপত্তি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যে কোনো নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নে পরিবর্তনটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্রমতে আমরা যাচাই করে দেখবো কার জেতার সম্ভাবনা আছে কার নেই তাছাড়া এখনও নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় বাকি আছে। সময় যত যাবে ততই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। আমাদের সঙ্গে কে থাকবে, কে থাকবে না বা নতুন জোট হবে কি হবে না, আর নতুন জোট হলে হোক, অসুবিধা নাইতো, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় অনেকেই ভুলে গেছেন ’৭৫ এর পর দেশে বারবার ক্যু হচ্ছিল। কে কখন কি হয়ে যায় তার ঠিক ছিল না, এই ছিল বাংলাদেশের অবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী ‘টক শো’ আয়োজকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকে আপনারা এত কথা বলেন, টক শো করেন, কিন্তু, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কে এত কথা বলেছে বলেন তো? কেউ সে সুযোগও পায়নি। কারণ, কথা বলার কোনো অধিকার ছিল না।

তিনি বিদ্রুপাচ্ছলে বলেন, ‘কোথায় টক শো আর কোথায় মিষ্টি কথা, সে তেতুলের টকই হোক আর রসগোল্লার স্বাদ, কোনোটাইতো কেউ পায়নি’ তবে, এখন শুনি, সব কথা বলার পরে বলে, কথা বলার কোনো অধিকার নাই।’

তিনি বিএনপি’র আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন রাস্তায় আন্দোলন কিন্তু জনগণ সাড়া না দিলে সেটাতো আর আমাদের দায়িত্ব না। কিন্তু, আওয়ামী লীগ যে বিএনপি’র হাতে নির্যাতিত সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। আওয়ামী লীগের ওপর সবাইতো চড়াও হয়েছে। সেই জিয়াউর রহমান শুরু করলো তার পর একের পর এক। লাশ টানতে টানতে আর আহতদের চিকিৎসা করাতে নাভিশ্বাস উঠেছিল আমাদের।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে কিন্তু সেই পরিবেশ নাই। এমনকি আমার পার্টির যদি কেউ অন্যায় করে, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেই না, যে আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, কিছু করবো না, তা নয়। যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছি। আমি চাই, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক এবং দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আসুক,’ সেটাই তিনি চান বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন যারা তত্ত্বাবধায়ক বা ইত্যাদি বলে চিৎকার করছেন, তারা ওয়ান-ইলেভেনের কথা ভুলে গেছেন? ২০০৭ এর কথা ভুলে গেছেন, কী অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিল? সেখান থেকে তো সবাই অন্তত মুক্তি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে এই ২০২২ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে কথা বলার যে অধিকার, চলার অধিকার, সমালোচনার অধিকার, প্রশংসা করার অধিকার সবই তো পাচ্ছেন। কেউ তো কাউকে মুখ বন্ধ করে রাখছে না। কাউকে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। পূর্ণ স্বাধীনতা এটা তো আমি দিয়েছি, এটা তো স্বীকার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেলো, এটা আপেক্ষিক প্রশ্ন। বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত সব বিষয়েই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যার সবদিকে ভারত। একপাশে ছোট্ট একটুখানি মিয়ানমার সীমান্ত। বাকি সীমান্তজুড়ে বঙ্গোপসাগর, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো-বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের সব দল-মত এক থাকে।

বাংলাদেশের ইস্যুতে ভারত সবসময় আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের সব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, পাশাপাশি, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে স্থলসীমান্ত বিল পাস হয়েছিল।

তিনি বলেন, যখন দু’টি দেশ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হয়, তখন এটি বাস্তবসম্মত যে অনেক ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। তবে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। ‘আমি সবসময় মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা সমাধান করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি আছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রেল ও সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। একে একে সেগুলো তো সব চালু হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এতকিছু করার পরও বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে কিছুই হয়নি। এটা মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের বিষয়।

বাংলাদেশ যাই করে ভারতের সঙ্গে সমান অধিকার ঠিক রেখেই করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থের কথা ভুলে যায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেই সব চুক্তি করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, গঙ্গার পানি চুক্তির কথা বলতে ভুলেই গেছেন। বিএনপি সব সময় দেশের স্বার্থের কথা এমন ভুলেই যায়। এমনকি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর ভারতের সব পণ্যের বাংলাদেশের বাজারে অবাধ প্রবেশাধিকার দিয়ে দিলে এক রাতের মধ্যেই বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হয়ে যায় বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এবারের সফরে কুশিয়ারার পানিবণ্টন চুক্তি সবচেয়ে বড় অর্জন। এ চুক্তির ফলে সিলেট অঞ্চলে ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের সফরে গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানিবণ্টনে আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই সমঝোতা স্মারকের ফলে রহিমপুর সংযোগ খালের মাধ্যমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত ইতিবাচক বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করছে। নিজেদের মধ্যে অস্ত্রবাজি ও সংঘাত করছে। পরিবেশকে তারা আরও নষ্ট করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতকে আমরা এ বিষয়টি বলেছি। ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে। এরা দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত থাকে। ভারত মনে করে, এটার সমাধান হওয়া উচিত। তবে, আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।

বাংলাদেশ জাতির পিতা ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আলোকেই তার সরকার পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার মাধ্যমে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ করলেও এই অঞ্চলের স্থিতি বিনষ্ট হয়নি।

এক প্রশ্নর জবাবে সামনে অর্থপাচারকারী আরও অনেকের নাম আসছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, অর্থপাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আছে সেটা আপনারা লিখবেন কি না সন্দেহ। আমি সোজা কথায় বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সামনে তাদের নাম আসবে, তবে, আপনারা ছাপাবেন কি না সেটা আমি দেখবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুইস ব্যাংকে আমরা বহু আগে ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম। তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তালিকা আসে নাই। মানিলন্ডারিং বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডলার সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে কোনো ব্যয় ছিল না, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরে যখন মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় তখন এটা স্পষ্ট যে ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যখন কোনো উৎস থেকে ঋণ নেয়, সব সময় সময়মতো তা পরিশোধ করে। যে কারণে দেশটি কখনও খেলাপি হয় না। সুতরাং, এটিও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর কিছুটা চাপ দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলার নিয়ে কিছু গোপন খেলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু সে অনুযায়ী নজরদারি করা হয়েছে এবং সে কারণেই ডলারের অবস্থা স্থিতিশীল অবস্থায় আনা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে (ডলারে) সংকট দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এখানে আমাদের কতটা দায়িত্ব আছে?’

তিনি বিশ্ব মন্দায় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার এবং সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন।

জেডআই/এএল

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ