• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

অঢেল সম্পদ নিয়ে যা বললেন রমনার ওসি মনিরুল

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২, ১২:৩২ এএম

অঢেল সম্পদ নিয়ে যা বললেন রমনার ওসি মনিরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) মনিরুল ইসলাম। বর্তমানে নবম গ্রেডের স্কেলে চাকরি করেন তিনি। স্কেল অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। ১৯৯২ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম। তখনকার সময় এই পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। প্রায় ৩০ বছরের চাকরিজীবনে বেশিরভাগ সময় ঢাকা রেঞ্জে ছিলেন। কিন্তু এই স্কেলে চাকরি করেও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, চাকরি জীবনে ঘুষ আর বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট করাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সে অভিযোগের বিষয়ে ওসি মনিরুলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে অভিযোগের ৭৫ ভাগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।


মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সিটি নিউজ ঢাকার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে এ দাবি করেন তিনি।

ফোন কলে মনিরুলের নিকট অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগের ৭৫ ভাগই মিথ্যা। আমি এ বিষয়ে কোনো মতামত দিতে ইচ্ছুক নই।'

তার কথার ভিত্তিতে অভিযোগের ২৫ ভাগ সত্য বলে ফুটে উঠেছে। ২৫ ভাগ সত্যের বিষয় উল্লেখ করে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

ওসি মনিরুলের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলায়। রাজধানী ঢাকার বছিলায় আটতলা বাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তার চারটি প্লট রয়েছে তার। একইসঙ্গে বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে এই প্রতিবেদক বছিলায় গেলে আটতলা বাড়িটির সন্ধান পান। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘বছিলা গার্ডেন সিটির ই ব্লকের ২০ নম্বর বাড়ির মালিক রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।’


একইসঙ্গে, মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে গেলে সেই বাড়িটিরও সন্ধান পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, ৭নং রোডের ২৯ নম্বর বাড়িটি ওসি মনিরুলের। এ বাড়িটি নিয়ে মামলা চলছে।

তবে বাড়িটির মালিকানা নিয়ে ভিন্নমত দেন মনিরুলের ভাতিজা বলে দাবি এক ব্যক্তি। তিনি তার নাম প্রকাশ করতে আপত্তি জানান। তিনি জানান, ‘তার বাবা শফিকুল ইসলাম ওসি মনিরুলের বড় ভাই। আর এই সম্পত্তিগুলো তার বাবার বলেই দাবি করেন তিনি।

প্রায় সময় বাড়িটির সামনে ‘রমনা থানা’ লেখা গাড়ি দেখা যায়। এমন প্রশ্ন তুললে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তার বাবা শফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। অসুস্থ ভাইকে দেখতে এ বাড়িতে আসেন তিনি।’

তাদের আয়ের উৎস কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বাবার মালিকানায় শফিক এন্ড ব্রাদার্স নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানকার আয় থেকেই এসব সম্পত্তির মালিকানা তাদের হয়েছে।


উল্লেখ্য, ওসি মনিরুল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এসআই ও পরিদর্শক হিসেবে দুই দফায় প্রায় ৪ বছর ৮ মাস কাজ করেন। ওই সময় তিনি রাজধানীর বছিলায় চার কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি করেন।

অন্যদিকে ওসি মনিরুলের নামে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আলী আকবর নগর এলাকার তেঘরিয়া মৌজায় ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটে একটি টিনশেড ঘর করে আলফা বলপেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মনিরুল ইসলামের নামে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নতুন বাক্তারচর গ্রামের শেষ সীমানায় ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বালুচর গ্রামে চরপানিয়া মৌজায় ভেনাস লেকভিউ আবাসন প্রকল্পে ৬০ শতক জমি রয়েছে।

একইসঙ্গে অভিযোগ উঠে, ২০০৫ সালে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কান্তি সরকারের ছয় কাঠার জমি দখল করেন মনিরুল ইসলাম। তখন তিনি এসআই ছিলেন। ওই জায়গায় তার ভাই শফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকেন।

ওসি মনিরুল কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তা জানতে হাইকোর্টে রিট ও দুদকে অভিযোগ জমা দেন ব্যারিস্টার সুমন। অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন দুদক। আর তিন মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

এআরআই/ডা

আর্কাইভ