• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: সন্তু লারমা

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২, ১০:৩৫ পিএম

আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: সন্তু লারমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন সামরিক শাসন চলছে। আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এমন কোন আদিবাসী পরিবার নেই যে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সন্তু লারমা বলেন, '১৯৭২ সালে সংবিধান রচনার মাধ্যমে আদিবাসীদের পরিচয় হরণ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল-সবাই বাঙালি। আদিবাসীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এখন আদিবাসীদের চিরতরে বিলুপ্ত করতে চায় শাসকগোষ্ঠী।'

নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, শান্তি চুক্তির পরিণতি এখনও দৃশ্যমান হয়নি। সমতলে আদিবাসী হত্যার বিচার হয়নি। আদিবাসী বলা যাবে না বলে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছিল তারা কারা? তারা বলছে আদিবাসীর সংখ্যা কমছে। কিন্তু আদিবাসীর সংখ্যা কমছে না, এরা লুণ্ঠিত হয়ে চলে গেছে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আদিবাসীর পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দের ব্যবহারকে অবমাননাকর। আদিবাসীদের সমস্যা সামাজিকভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। এজন্য শান্তি চুক্তি করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে যারা বলেন-আদিবাসী বললে সংবিধান লঙ্ঘন হবে, তারা আসলে সংবিধান বুঝেন না। আমাদের নারী সুরক্ষা আইন দরকার। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এসময় আদিবাসীদের রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আদিবাসীদের জমি জালিয়াতি করে নেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে ভূমি কমিশন কাজ করছে না আর সমতলে ভূমি কমিশন নেই। সমতল অঞ্চলের 'আদিবাসী'দের পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

আদিবাসী নারী পরিষদের সভাপতি বাসন্তী মুর্মু বলেছেন, পাহাড় ও সমতলর আদিবাসীদের জন্য জাতীয় সংসদে দুইটি সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ রাখতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজ বৈষম্য হচ্ছে। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, আদিবাসীদের নিয়ে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে-তা মেনে নেওয়া যাবে না। আদিবাসীদের জয় অবশ্যই হবে।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শাসকরা আদিবাসীদের গণমানুষ বলে মনে করে। তাদেরকে নাগরিক বলে মনে করে না। আদিবাসীরাও মানুষ, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে অপমান করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ের আদিবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা মানুষ, আমরা বাঁচতে চাই, আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

অলীক মৃ বলেন, আদিবাসীদের অধিকার রাষ্ট্র এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মূলত আদিবাসী নারীরা হচ্ছেন নিজ সংস্কৃতির ধারক-বাহক। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক-বাহক এই আদিবাসী নারীরা ভালো নেই। কারণ, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী নারীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত আছে। মধুপুরে এখনও আদিবাসীদের হত্যা বন্ধ হয়নি।

জান্নাত-এ-ফেরদৌসি বলেন, আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যহীন নাগরিক রাষ্ট্র গড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতারাসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী কালচারাল ফোরামের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে আবার র‍্যালি করা হবে। র‍্যালিটি শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্ত্বর, টিএসসি হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে।

জেডআই/

আর্কাইভ