• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

করোনার প্রভাবে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা : টোয়াব

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১, ০২:০২ পিএম

করোনার প্রভাবে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা : টোয়াব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২০ হাজার কোটিরও বেশি। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের পর বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টায় ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। গত বছরের করোনার কারণে পর্যটনের সঙ্গে জড়িতদের সবার ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

টোয়াবের নেতারা জানান, টোয়াবের দাবি পর্যটন কেন্দ্রগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া হোক। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্যটন খাত। করোনাভাইরাসের শুধু টোয়াব সদস্যদের ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চ থেকে সবকিছু স্থবির হওয়ায় পর্যটন খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। চলমান পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি হতে পারে। এ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ও ট্যুর অপারেটরদের বাঁচানো লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে টোয়াব। 

টোয়াব সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্নিং বডি সদস্য মো. রাফেউজ্জামান বলেন, পর্যটন এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৯ সালের জিডিপিতে পর্যটন ৪ দশমিক চার শতাংশ অবদান রেখেছিল।

তিনি বলেন, মহামারির কারণে পর্যটন খাতকে গত বছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুণতে হয়েছে। এ শিল্পে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই হতাশ হয়ে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা টোয়াবের পক্ষ থেকে গত বছর করোনা মাহমারির শুরু থেকেই ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য

প্রণোদনার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছি, যা আজও সফলতার মুখ দেখেনি। এমনকি সেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রকার ব্যাংক লোন গ্রহণ করতে পারেনি। 

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ৩৪৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ বেশি দেওয়া হলেও এই বরাদ্দ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য খুবই সামান্য। 

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা বলেছেন। কিন্তু খাতটিকে আর্থিক সংকট থেকে বের করে আনার বিষয়ে কোনো প্রকার দিক নিদের্শনা দেননি বলে জানান টোয়াব সভাপতি।

টোয়াবের দাবিগুলো হচ্ছে- 

১. বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে দ্রুত উত্তোরণে ও দেশের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় স্পটগুলো স্বাস্থ্যবিধি এবং এসওপি (Standard Operational Procedure) মেনে দ্রুত খুলে দিতে জোরদাবি জানাচ্ছি। যেহেতু সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে পরিবহন, দোকানপাট ও অন্যান্য সবকিছু খুলে দিয়েছে, সেহেতু আমরা মনে করি স্বাস্থ্যবিধি ও এসওপি মেনে চলার শর্তে বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে।

২. গত বছরের করোনার কারণে শুধু টোয়াব সদস্যদের ক্ষতি হয়েছে পাঁচ হাজার সাতশ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চ থেকে সবকিছু স্থবির হওয়ায় পর্যটন খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। চলমান পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত হলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি হতে পারে। অনেক কথা বলার পরেও ট্যুর অপারেটরদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয় নাই। টোয়াব সদস্যদের অনেকেই হতাশ হয়ে পর্যটন সেবা থেকে অন্য ব্যবসায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমারা টোয়ারের পক্ষ থেকে ট্যুর অপারেটরদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে। এর ফলে পর্যটন শিল্প ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।

৩. ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স রিনিউয়াল ফি অনেক বেশি। করোনাকালীন প্রায় সব মত টোয়াব সদস্যদের জন্য পরবর্তী বছরের ট্রেড লাইসেন্স রিনিউয়াল ফি মওকুফ করার টোয়াবের পক্ষ থেকে দাবি জানান।

৪. টোয়াবের সদস্যরা পর্যটকদের সরাসরি সেবা দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের ভয় উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টোয়াবের সদস্যরা সন্মুখযোদ্ধাদের মত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সেবা ও বাংলাদেশের পর্যটনের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি করোনার বিস্তার রোধে পর্যটকদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও ভ্রমণকালে অসুস্থ পর্যটকদের সেবা দেওয়া ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে টোয়াব সদস্য ও তাদের পরিবার এবং টোয়াবের সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা খুব জরুরি। আমারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

৫. বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের যথাযথ উন্নয়ন ও বিকাশে পর্যটনের জন্য সরকারের কাছে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে টোয়াবের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সবুজ
আর্কাইভ