• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সারাদেশে বন্যার পূর্বাভাস

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২, ১১:০১ পিএম

সারাদেশে বন্যার পূর্বাভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে সারাদেশে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু থেকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে ভারি বর্ষণে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ বর্ষায় ছেয়ে যাবে গোটা দেশ।  আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আরো অগ্রসর হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূল ও উত্তরাঞ্চলে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বন্যাপ্রবণ এলাকায় সংগ্রহের উপযোগী ফসল আগামীকাল ৫ জুনের আগেই সংগ্রহ করতে হবে। বন্যার সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের উত্তরের তিন বিভাগরংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটে ভারী বর্ষণ এবং উজানে ভারতীয় ভূখণ্ডে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরের নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে উত্তরের তিন বিভাগের নিচু এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে গিয়ে নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সতর্কবার্তায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করে এলাকাগুলোয় বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যাপ্রবণ এলাকায় সংগ্রহের উপযুক্ত কৃষি ফসল ৫ জুনের  আগেই সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। নতুবা তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বর্ষা মৌসুমের কারণে চলতি জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের ভেতর এবং উজানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীগুলোর পানি কোথাও কোথাও দ্রুত বেড়ে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। দেশের ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া দফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসে স্বল্পমেয়াদি বন্যার পাশাপাশি দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে কম শক্তিমাত্রার বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে; যা প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকে। এই জলীয় বাষ্প মেঘ তৈরি করে। যেটা বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে বলা হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের মাত্রা নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে বেশি বৃষ্টি হয় আর নিষ্ক্রিয় হলে বৃষ্টি কম হয়।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, ‘সাধারণত ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হলে এর প্রভাবে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়। চলতি জুনের প্রথম দিকে সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের কয়েকটি স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। হাওর ও সীমান্তবর্তী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে গত এপ্রিলের শেষ দিকে এক দফা এবং মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় দফায় আকস্মিক বন্যা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জের অন্তত ১৪টি উপজেলা এই হঠাত্ বন্যার শিকার হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর ফলে দেশের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা ও হিমালয় পাদদেশীয় অববাহিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুন মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে তিস্তা অববাহিকা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার-মেঘনা অববাহিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ওই অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে সময়বিশেষে বিভিন্ন নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী দুই সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকাভুক্ত নদ-নদীগুলোর পানি ঐ সময়ে দ্রুত বাড়তে পারে। সেখানকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

জেডআই/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ