
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম
সময় অনেক গড়িয়েছে,
কিন্তু এখনও কলেজছাত্রী মোসারাত
জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার নিয়ে
রহস্য কাটেনি।
পরিবারের
দাবি, মুনিয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে
চালানোর জন্য সিলিং ফ্যানের
সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখা
হতে পারে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিষয়টি অনেক
গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়াও পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করছেন। বাসা থেকে ফুটপ্রিন্টসহ
সব ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মুনিয়া
আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা
করা হয়েছে, বিষয়টি ক্লিয়ার হতে কিছু সময়
লাগবে।
পরিবারের দাবি, মুনিয়ার মৃত্যু একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ সম্পর্কের কিছু ছবি, ভিডিও এবং ডকুমেন্টস মুনিয়ার মোবাইল ফোনে সংগ্রহ ছিল। ডকুমেন্টগুলো উদ্ধারের জন্য ৫০ লাখ টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ, মানসিকভাবে হ্যারেজমেন্ট করা হয়। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী ভবনে মোসারাত জাহান মুনিয়া বোনের বাসায় আসে। ১২ এপ্রিল ঢাকায় ফিরে যায়। ফেরার সময় বলে গিয়েছিল সায়েম সোবহান আনভীর দেশে আসছেন। আমাকে বলছে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য।
মুনিয়ার বোন বলেন, বনানী
থেকে গুলশানে ওঠার আগে কুমিল্লায়
চলে আসে মুনিয়া। তখন
সে বলেছিল, আনভীর মোবাইল ফোন নেয়ার চেষ্টা
করেছিল, কিন্তু পারেনি। মোবাইলে থাকা সম্পর্কের ডকুমেন্টস
উদ্ধারের জন্যই আনভীর আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে
হত্যা করেছে।’
এ
বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই মামলায় আনভীর
আসামি। চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে আইনের আওতায়
আনতে পারে। তবে তার যেহেতু
একটি জামিন আবেদন হাইকোর্টে পেন্ডিং আছে তাই পুলিশকে
তিনি বলতে পারেন, আমার
একটি জামিন আবেদন চলমান আছে।
মামলার
আসামি এভাবে ঘুড়ে বেড়ানোর নিয়ম
আছে কি না এমন
প্রশ্নের উত্তরে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এটা নির্ভর করে
তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর। তিনি চাইলে
গ্রেফতার করে আইনের আওতায়
আনতে পারেন।’
তদন্ত
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য অনেকটা পরিষ্কার। মরদেহ উদ্ধারের সময় পাওয়া বিভিন্ন
আলামতই প্রমাণ করে ফ্ল্যাটে একমাত্র
বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান
আনভীরের যাতায়াতই ছিল এবং তিনিই
ঢাকায় মুনিয়ার একমাত্র অভিভাবক ছিলেন। বিবাহের প্রলোভন, বিদেশে বিয়ে করে স্থায়ী
হওয়া এবং ঢাকায় অভিজাত
ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার লোভে
ফেলে দীর্ঘদিন মুনিয়াকে ব্যবহার করেছেন আনভীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্ল্যাট-প্লট, বিদেশে গিয়ে ঘরসংসার করা
কিছুই কপালে জোটেনি মুনিয়ার। ফলে দীর্ঘদিন বিয়ের
প্রলোভনে ধর্ষণের বিষয়টিও তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। তদন্ত খুবই সতর্কতার সঙ্গে
এগোচ্ছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করছেন। নজরে রাখা হয়েছে
মামলার একমাত্র আসামি আনভীরকেও।
সূত্র
বলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্টে
আত্মহত্যা প্রমাণ হলে একরকম, আর
হত্যা প্রমাণ হলে অন্যরকম। আত্মহত্যা
হলে মৃত্যুর আগে ও পরের
ঘটনাসমূহ এবং দীর্ঘদিন নিজ
হেফাজতে রেখে বিয়ের প্রলোভনে
ধর্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে তদন্তে। অস্বাভাবিক
মৃত্যু হলে তদন্তের পরিধি
আরো বাড়বে, এমনকি আরো অনেকেই জড়িয়ে
যেতে পারেন ঘটনার সঙ্গে। মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের পরিচয় থেকে শুরু করে
দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস এবং মৃত্যু পর্যন্ত
আনভীরের সাহায্যকারী আরো অনেকেই ফাঁসবেন।
তানিয়া
বলেন, ‘মুনিয়ার ঘটনায় ফেঁসে যাওয়া প্রতারক প্রেমিক আনভীর মামলা তুলতে বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থিক প্রলোভনের পাশাপাশি নানা চাপ দিচ্ছে।
বানোয়াট কাহিনী জনগণকে খাওয়ানোর অপচেষ্টা করছে। একই সঙ্গে আমার
চরিত্রহনন ও কুৎসা রটাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ফেক আইডি, পেজ
ও অজ্ঞাত অনলাইনের মাধ্যমে সেগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়ানো
হচ্ছে। মুনিয়া হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে
ও ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত
করতেই পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হচ্ছে বলে
সহজেই অনুমেয়।’
মুনিয়ার
অপমৃত্যুর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি মো. আবুল
হাসান বলেন, এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন
পাওয়া যায়নি। চাঞ্চল্যকর মামলাটি পুলিশ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। ছোট-বড় প্রতিটি
বিষয় আমলে নেয়া হচ্ছে।
তদন্তে নিশ্চিত হলে জড়িত অপরাধীদের
আইনের মুখোমুখি করা হবে। তবে
যেহেতু এটি তদন্তাধীন একটি
মামলা তাই তদন্ত সংশ্লিষ্ট
কোনো কথা বলা যাচ্ছে
না।
বসুন্ধরা
গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান
আনভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি
না? এমন প্রশ্নের উত্তরে
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ
মামলা। তাই এ বিষয়টি
নিয়ে কথা বলা যাবে
না।’
লাইজুল/এম. জামান