প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১, ০৪:৫৪ পিএম
ভাইরাস
ও ছত্রাকের আক্রমণ শনাক্তে রোগীর মস্তিষ্কের রস সংগ্রহে ব্যবহৃত
হয় বিশেষ ধরনের এক সুই। দেশের
বাজারে যার প্রতিটির মূল্য
২৫০ টাকা। অথচ এই সুই
প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায়
কিনেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস
ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
টাকার
অঙ্কে যা বাজারদরের চেয়ে
গুনে গুনে ১০০ গুণ
বেশি। আর শুধু সুই
নয়, এমন অস্বাভাবিক দামে
ঠিকাদারদের কাছ থেকে আরও
বেশ কিছু এমএসআর (মেডিকেল
সার্জিক্যাল রিকুইজিটি) পণ্য কিনেছে সরকারের
এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। এমন দামে যন্ত্রপাতি
ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যা
পৃথিবীর কোথাও এ দামে বিক্রি
হয় না।
অস্ত্রোপচারের
সময় চামড়া আটকে রাখার জন্য
ব্যবহৃত হয় একধরনের বিশেষ
যন্ত্র, যার নাম টিস্যু
ফরসেপস। দেশের বাজারে যা প্রতিটি পাওয়া
যায় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০
টাকার মধ্যে। কিন্তু এটি কেনা হয়েছে
প্রতিটি ২০ হাজার টাকায়।
রোগীর প্রস্রাব ধরে রাখার ইউরিনারি
ব্যাগের প্রতিটির বাজারমূল্য ৬০ টাকা, কিন্তু
এই ব্যাগই প্রতিটি কেনা হয়েছে ১
হাজার ৩০০ টাকায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মাত্র
এক মাসে এই কেনাকাটা
করেছে নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে দুটি ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছয়
কোটি টাকার এমএসআর পণ্য অস্বাভাবিক দরে
কেনাকাটার তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ২০১৯ সালে তদন্ত
কমিটি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তবে কেউ শাস্তি
পায়নি আজও।
এভাবে
অস্বাভাবিক দামে পণ্য কেনাকাটার
বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের
সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে এই প্রতিবেদক
ব্যর্থ হন। এরপর তার
মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপ
নম্বরে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া
যায়নি।
নিউরো
সায়েন্স হাসপাতাল গড়ে মাসে ১০
থেকে ১১ কোটি টাকার
এমএসআর পণ্য কেনাকাটা করে
থাকে। বছরে প্রতিষ্ঠানটি ১৩০
কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা করে।
যার বড় অংশেই এমন
সাগর চুরি হয় বলে
সংশ্লিষ্টদের মত। আর সারা
দেশে স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের
এই খাতে গত অর্থবছরে
বাজেট বরাদ্দ ছিল প্রায় চার
হাজার কোটি টাকা।
এ
প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক
চেয়ারম্যান ও ভোক্তা অধিকার
নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান
গোলাম রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিক দামে
কেনাকাটা ও দুর্নীতি রয়েছে,
এটা নতুন করে বলার
কিছু নেই। এটি দেখার
কথা সরকারের হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কর্তৃপক্ষের। এ ধরনের অস্বাভাবিক
কেনাকাটার তথ্য প্রায়ই শোনা
যাচ্ছে। সিজিএর উচিত হবে স্বাস্থ্য
খাতের এ ধরনের কেনাকাটা
নিয়ে দ্রুত একটি বিশেষ অডিট
করা এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা।’
আরআই/এম. জামান