নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
১৫ দিন পিছিয়ে যাওয়ার পরও অনেকটা অগোছালো ও দায়সারাভাবে আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বিকাল ৩টায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হবে। করোনা সংক্রমণ কমে এলে মেলার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হতে পারে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য এখনও তৈরি হয়নি মেলা প্রাঙ্গণ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে এখনও অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ স্টল বা প্যাভিলিয়নের কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলার মাঠে তৈরি হয়নি ইটের পথ। লিটলম্যাগ চত্বরও পুরোটাই ফাঁকা। বলা চলে অনেকটা অগোছালো ও অপ্রস্তুত রেখে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এবারের বইমেলা।
অন্যান্য বছর যেখানে পহেলা ফেব্রুয়ারিতেই মেলা গুছিয়ে ওঠে, সেখানে ১৫ দিন সময় পাওয়ার পরও কেন গোছানো হয়নি- এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মেলা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের উত্তর, মেলা হয় কি হয় না, এর জন্য কাজ ধীরগতিতে চলেছে।
এমনিতেই মেলার সময় অর্ধেকে নেমে আসায় অনেক প্রকাশকই মেলায় অংশ নিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, মেলার খরচই উঠবে না। গত বছরও মেলায় অংশ নিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যদিও বইমেলার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি নিম্নমুখী ফলে মেলার সময় বাড়তে পারে। সরাসরি তিনি কোনো উত্তর না দিলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বইমেলার সময়সীমা ১২ মার্চ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এমন অগোছালো মেলা গত ২০ বছরে দেখা যায়নি।’ একই সুর অন্য প্রকাশকদের কণ্ঠেও। তারা বলেন, মেলা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেও মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত না হওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের বইমেলার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘মেলার প্রস্তুতি নিতেই দেরি করেছি। কারণ, মেলা শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে আমরা দ্বিধায় ছিলাম। তবে আশা করছি, উদ্বোধনের আগেই মেলা প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে।’
মেলার সার্বিক আয়োজনের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘এবারের মেলায় প্রবেশের জন্য প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। মেলায় প্রবেশের আগে দর্শনার্থীদের স্যানিটাইজ করা হবে। তবে দর্শনার্থীদের কোনো টিকা সনদ দেখাতে হবে না। মেলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও স্টলের মালিক ও কর্মীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
তিনি জানান, এবারের চারটি বিষয়কে মাথায় রেখে আয়োজন করা হচ্ছে। সেগুলো হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ৫০ বছর।
এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান অংশে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলায় তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বইমেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
ফিরোজ
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন