• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন দ্বন্দ্ব নয়, একত্রে কাজের নির্দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২, ০৫:২৩ পিএম

জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন দ্বন্দ্ব নয়, একত্রে কাজের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেদের জনগণের সেবায় নিয়োজিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নয়, একত্রে সমন্বয় করে কাজ করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মেলনের শেষ দিনে ডিসিদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জেলা-উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের (সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

সম্মেলনে ডিসিদের ২৬৩ প্রস্তাবের মধ্যে ক্ষমতা বাড়ানো-সংক্রান্ত বেশির ভাগ প্রস্তাবই অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে নিজ নিজ কাজের প্রতি কঠোরভাবে দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসব অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব ও দফতরপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় তারা ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাবসহ বিভিন্ন বিষয় মনোযোগসহকারে শোনেন এবং ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া বিষয়গুলো সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ডিসি বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেবা নিতে এসে কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুদ্ধাচার বাস্তবায়নসহ দুর্নীতি প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ গুজব ছড়ালে বা অপপ্রচার চালালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শও এসেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ডিসি-এসপি যারা প্রশাসনের কাজে নিয়োজিত, সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করবেন। এটাই ছিল আজকের মূল কথা।

দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনের একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। 

তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসামরিক প্রশাসনের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি নিজেই এখানে এসেছি এটা ইন্ডিকেট করে আমরা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘কমিশনের একটি কাজ হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। দুর্নীতি যেন না হয়, দুর্নীতি থেকে যেন মানুষ দূরে থাকে তা দেখাও দুদকের কাজ। এজন্য আমরা ডিসিদের অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যেন আমাদের সব সময় সাহায্য করেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া অপপ্রচারের একটি বড় ক্ষেত্র। গত আট বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, গুজব রটেছে, রটানো হয়েছে অনেক বেশি। সবই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে করা হয়েছে।

 স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা ডিসিদের বলেছি গতবার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছেন, এবারও তা করতে হবে। ওমিক্রনের কারণে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাসে, ট্রেনে, স্টিমারে যখন লোক চলবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব যতটুকু সম্ভব মানতে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘ডিসিরা প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে কমিটি করার পরামর্শ দিলেও তাতে সম্মতি দেয়া হয়নি। আমিও ডিসি ছিলাম। আমি মনে করি, এটার প্রয়োজন নেই।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব জায়গায় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে সমস্যা হয়, সেগুলো সমাধান করতে হবে।

এদিকে ডিসি সম্মেলনে মোবাইল কোর্ট আদালতের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে দণ্ডবিধি-১৮৬০-এর ২২৮ ধারা মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাবসহ জাতিসংঘ মিশনে প্রশাসন ক্যাডার অফিসারদের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক ডিসি ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘অধিবেশনে আলোচনা নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে ডিসি সম্মেলনের প্রয়োজন আছে।

জেডআই/ডা

আর্কাইভ