• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

কঠিন শর্তে দিশাহারা সৌদি প্রবাসীরা

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২১, ০৫:১৭ এএম

কঠিন শর্তে দিশাহারা সৌদি প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

টিকিট কনফার্ম করার জন্য ঢাকার কারওয়ান বাজারে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে বসে ছিলেন সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ একরামুল কবির।কিন্তু রওনা হওয়ার আগেই সৌদি আরবে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিংয়ের নতুন শর্ত আসায় অন্য অনেকের মতো তিনিও পড়েছেন অনিশ্চয়তায়।

তার মত অনেকেই সৌদি সরকার ঘোষিত নতুন ভ্রমণ নির্দেশিকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সৌদিগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ অবস্থায় আর্থিক অনটনের শিকার এসব কর্মীদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিটি নিউজকে বলেন, সৌদিগামী কর্মীদের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ৩০ মে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তাদের কীভাবে অর্থ সহায়তা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, সভার আলোচ্য সূচিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে মাত্রাতিরিক্ত বিমান ভাড়া, বিদেশগামী কর্মীদের টিকাদান প্রসঙ্গ এবং সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর কর্মীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সৌদি সরকারের আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সৌদিগামী প্রবাসীরা। শর্তের মধ্যে রয়েছে :নগদ প্রায় ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে বাধ্যতামূলক হোটেল বুকিং দিয়ে সেখানে গিয়ে সাত দিনের কোয়ারেন্টিন, দেশটিতে গিয়ে দুই দফা ৬ হাজার টাকা খরচ করে করোনা টেস্ট, বাধ্যতামূলক মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স, ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাবশত করোনা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৫ লাখ রিয়াল বা সোয়া কোটি টাকা জরিমানা, ৫ বছরের জেল, সৌদি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শর্ত।

শর্ত মেনে অনেক প্রবাসীর পক্ষে সৌদি আরব যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এসব শর্তের কারণে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শর্ত শিথিলের দেন-দরবারে কোনো লাভ হয়নি। তাই সৌদির শর্ত মেনেই সোমবার ( ২৪ মে) থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ফ্লাইট কমিয়ে সীমিত করা হয়। এতে অনেকেই বিপাকে পড়েন ।

মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ বিমান ভাড়াধার্য করার অনুরোধ জানিয়ে তারা এর মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। যাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের আর্থিক চাপ লাঘব হয়।

সৌদি সরকার গত ১০ মে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের জন্য একটি নতুন ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করে। যা কার্যকর হয় ২০ মে থেকে। যে কারণে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার প্রবাসী কর্মী সৌদি আরবে তাদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। নতুন ওই নির্দেশিকা অনুসারে, টিকা না নেওয়া প্রবাসী কর্মীদের অতিরিক্ত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদি আরবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। নির্দেশিকায় একই সঙ্গে সৌদি আরবে ঢোকার আগেই কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা বীমা ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিংয়ের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়।

সৌদি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এসব নির্দেশ অমান্যকারীদের সৌদি থেকে বিতাড়নের পাশাপাশি আবার এ দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

নতুন এই ভ্রমণ নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গত ২০ মে থেকে পরবর্তী নয় দিনের জন্য সৌদিগামী ফ্লাইটগুলো (সপ্তাহে ১৮টি) বাতিল করে। বিমান কর্তৃপক্ষ বলেছিল, সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে নতুন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য তাদের কিছু সময় লাগছে। যদিও এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই সংস্থাটি তাদের প্রস্তুতির কাজ শেষ করতে করতে পারেনি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, কল্যাণ তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে প্রবাসী কর্মীদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রবাসী কর্মীদের অর্থ সহায়তা দিতে চাচ্ছি। তার আগে আমাদের দেখতে হবে, কারা এটা পাবে এবং কীভাবে পাবে।এর মধ্যে অনেকগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি প্রবাসী কর্মীদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

২৩ মে রিক্রুটিং এজেন্সি ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েটস (রাফা) ও সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুটি আলাদা চিঠিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য অর্থ সহায়তা চায়। যাতে কর্মীরা সৌদি আরব পৌঁছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ও কোভিড-১৯ টেস্টের খরচ বহন করতে পারেন। রাফা তাদের চিঠিতে জানায়, মাত্রাতিরিক্ত বিমান ভাড়ার কারণে এর মধ্যে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি ও প্রবাসী শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সৌদি সরকারের আদেশের বরাত দিয়ে সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, যেসব প্রবাসী নিজ নিজ দেশে আটকা পড়েছেন বিনামূল্যে তাদের ইকামা (আবাসিক অনুমতি) ও ভিসার মেয়াদ আগামী ২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

সৌদি গেজেটের প্রতিবেদন অনুসারে, জাতীয় তথ্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় ইকামা ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে বলে দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে।

 

আরিয়ান//২৬ মে/২০২১

আর্কাইভ