প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২, ১১:১৬ এএম
প্রতি বছরের ন্যায় পৌষ মাসের শেষদিনটিকে বিশেষভাবে মনে রাখতে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা সাকরাইন উৎসব পালন করে থাকেন। আর পৌষসংক্রান্ত্রির এই উৎসবকে ঘিরে ঢাকাইয়াদের বাড়ি বাড়ি চলে পিঠা বানানো সহ ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম। জমকালো আলোকসজ্জা ও বর্ণিল আতশবাজি-ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। যদিও এবার সাকরাইনে আতশবাজি ও ফানুসের উপরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছিল।
গেল দিন শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) ছিল এ সাকরাইন উৎসব। ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মাঝে দিনভর চলে ঘুড়ি ওড়ানো আর কাটাকাটির খেলা। বাহারি রঙের ঘুড়ি তৈরি করা হয় সাকরাইন উৎসবে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গোয়াদার, চোকদার, মাসদার, গরুদান, লেজলম্বা, চারভুয়াদার, পানদার, লেনঠনদার, গায়েল ঘুড্ডিগুলো অন্যতম। বাহারি রঙের কাগজ, পলিব্যাগ ও বাঁশের অংশবিশেষ দিয়ে তৈরি হয় এসব ঘুড়ি। সঙ্গে থাকে বাহারি রঙের নাটাই, এ ছাড়া নাটাই ও ঘুড়িতে সংযোগ করা হয় বাহারি রঙের সুতা। সেসব সুতার মধ্যে রয়েছে রক সুতা, ডাবল ড্রাগন, কিং কোবরা, ক্লাক ডেভিল, ব্ল্যাক গান, ডাবল গান, সম্রাট, ডাবল ব্লেট, মানজা, বর্ধমান, লালগান ও টাইগারসুতা অন্যতম।
এসব বাহারি ঘুড়ি নিয়েই আয়োজন করা হয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। বাসার ছাদে এসব
প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগীদের মাঝে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ
নির্ধারণ করা হয়। ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় মূলত একসঙ্গে ঘুড়ি ওড়ার পর যিনি যত
বেশি উড়ন্ত ঘুড়ির সুতা দিয়ে ঘুড়ি কাটতে পারবেন, এবং শেষ পর্যন্ত
উড়ন্ত ঘুড়ি অক্ষত রাখতে পারবেন তিনি হবেন চ্যাম্পিয়ন। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার
বিতরণী অনুষ্ঠানও হয় জাঁকজমকপূর্ণ। সেই সঙ্গে নানা রকমের খাবারের আয়োজন থাকে এই
অনুষ্ঠানে।
মূলত এটি ঘুড়ি উৎসব হলেও বর্তমানে এতে যোগ হয়েছে আতশবাজি, ফানুস উড়ানো, ডিজে নাচ, উচ্চশব্দে গান, কেরোসিন মুখে আগুনের হলকা ছোড়া সহ আধুনিক নানা
অনুষঙ্গ।
এদিকে করোনার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় সরকার ১১ দফা বিধি-নিষেধ
জারি করেছে। ফলে এবারও এ ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে প্রশাসনের
পক্ষ থেকে। তবে এ বছর থার্টিফার্স্টে ফানুস পড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড
ঘটায় সাকরাইন উৎসব নিয়ে সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছে পুলিশ। উৎসবে এবার নিষিদ্ধ করা
হয়েছে ফানুস ও আতশবাজি।