প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২, ০৯:৩২ এএম
দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হতেই দুই মাসের ব্যবধানে আরেক দফা বাস বাড়ানোর জন্য
দর কষাকষি শুরু করেছেন বাস মালিকরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের
(বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠক করবে বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটায় বাস মালিকদের সঙ্গে পরিবহন কর্তৃপক্ষের
সভা হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে বাস ভাড়া বাড়ানো হবে কি না কিংবা বাড়ালে কত বাড়ানো
হবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনা কীভাবে কার্যকর করা হবে- তা
বুধবার মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক করা হবে। ভাড়া বাড়বে কি না, বাড়লে কতটা বাড়বে- সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে। ভাড়া বৃদ্ধি বৈঠকের উদ্দেশ্য নয়।
বিআরটিএ সবার আগে জনস্বার্থ দেখবে।'
তবে বাস মালিক পক্ষ ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে অনেকটা অনড়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন
মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার বাসভাড়া নিয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে আমরা আগের যে প্রজ্ঞাপন
ছিল সেটাই অনুসরণ করবো। সেখানে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে বাস ভাড়া ৬০ ভাগ
বাড়ানো হয়েছিল। আর যদি সরকার কোনো নির্দেশনা নতুন করে দেয় তাহলে আমরা সেটা দেখে
সিদ্ধান্ত নেব৷ অর্ধেক যাত্রী নিতে হলে বাস ভাড়া যৌক্তিকভাবে বাড়াতেই হবে৷ তা না
হলে মালিকেরা গাড়ি চালাবেন কী না জানি না। কারণ ভাড়া না বাড়ালে তেল খরচই উঠবে না।
ড্রাইভার হেলপারদের বেতন দেব কীভাবে?'
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে মাত্র দুই মাস আগে নভেম্বরের শুরুতে
বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সে সময় গড়ে ২৮ শতাংশ বাস ভাড়া বাড়ানো হয়৷ যদিও তেলের দাম
বেড়েছিল লিটারে ১৫ টাকা৷ ঢাকায় বাসের ভাড়া
কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। দূরপাল্লার
বাসের ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে।
কিন্তু আসন বিন্যাসের কারণে ৪০ আসনের বাসে সেই ভাড়া পড়ছে দুই টাকা ৩৪ পয়সা। এই
অবস্থায় আরেক দফা বাস ভাড়া বাড়ানো হলে জনসাধারণের জন্য সেটা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’
হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বাস ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের এখানে
দায়িত্ব আছে। যদি বাস ভাড়া বাড়ানোর যুক্তিও থাকে তাহলে সরকারের উচিত তাদের অন্য
কোনোভাবে সুবিধা বা ভর্তুকি দেয়া,
যাতে তারা বাস ভাড়া না
বাড়ায়। তাদের ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া যায়। ভারতসহ আরও অনেক দেশে অর্ধেক যাত্রী
নিয়ে বাস চললেও বাসভাড়া বাড়েনি। শুধু আমাদের দেশে যাত্রীদের বলির পাঠা করা হয়।’
মোজাম্মেল হক যুক্তি দিয়ে বলেন,
‘বাস্তবে বাসে সরকার
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া এখনই নেয়া হচ্ছে। সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে
শতকরা ১০০ থেকে ১৫০ ভাগ বেশি। আর বাসগুলোর ভাড়া নির্ধারণের সময় সিটের যে সংখ্যা
দেখানো হয় তার চেয়ে সিট কমপক্ষে ৩০ ভাগ বেশি থাকে। ফলে অর্ধেক যাত্রী নিলেও তাতের
লোকসান হওয়ার কথা নয়। তারা অতি লাভের লোভে মানুষের খারাপ সময়েও ভাড়া বাড়াতে চায়।’
এদিকে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্তে লঞ্চ মালিকরাও ভাড়া বাড়ানোর দাবি
তুলেছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং লঞ্চ মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে
জানা যায়, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তারা দরাদরি করছেন। এ বিষয়ে
এক-দু’দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।
২০২০ সালে লকডাউনের প্রথম দফায় ৬৮ দিন বাসসহ সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। সে বছরের ১ জুন থেকে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল শুরু হয়। মালিকদের প্রস্তাবে সে বার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। গত বছর দুই দফার লকডাউনের পরও ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলেছিল বাস।
অর্ণব