প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২, ০২:২৪ এএম
দেশে
ওমিক্রনে শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ১০ জন। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধিও পেতে পারে বলে ধারণা
করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে ওমিক্রনের এই সময়ে এখনও লকডাউনের বিষয়ে ভাবছে না স্বাস্থ্য
অধিদফতর। সিটি নিউজ ঢাকাকে এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক
ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। দেশে ওমিক্রনের এই পরিস্থিতিতে থেমে নেই সরকারের
বিভিন্ন পদক্ষেপও। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দেশব্যাপী
১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
করোনার
সঙ্গে প্রায় দুই বছর ধরে লড়াই করছে পুরো পৃথিবী। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববাসী দেখেছে করোনার
ভয়াবহতা। এই ভয়াবহতার রূপ দেখেছে বাংলাদেশও। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে মোট ৫৪ লাখ
৮২ হাজার ৪৯২ জন মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২৮ হাজার ৯৭ জন।
এযাবৎ বিভিন্ন নতুন ধরনও শনাক্ত হয়েছে করোনার। সর্বশেষ ওমিক্রনের আঘাত চলছে বিশ্বজুড়ে।
দেশেও শনাক্ত হয়েছেন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে নতুন
করে আরও ১০ জনের শরীরে এই ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের নমুনা নিয়েও
কাজ করছে অধিদফতর। ধারণা করা হচ্ছে, এটি করোনার ডেল্টা ধরনের চেয়েও দ্রুত সংক্রমিত
হতে পারে।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে চায় সরকার। এ জন্য এখনই লকডাউনের কথা না ভাবলেও সরকার কিছু ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ওমিক্রনের বিস্তার রোধ এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সেদিন
বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের ব্রিফও করেন।
মন্ত্রী জানান, অনেক বিষয় আলোচনা হয়েছে, সবকিছু এখনই প্রকাশ করা হবে না। যথাসময়ে মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উদ্বেগ রয়েছে। তবে এখনই লকডাউনের কথা ভাবছেন না
তারা। তাছাড়া এখনই লকডাউন দেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। এ ব্যাপারে আলোচনাও করেননি। লকডাউন
যেন না দেয়া লাগে সেজন্যই তারা আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে চান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আরও জানিয়েছেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণপরিবহনে আগের মতো অর্ধেক যাত্রীসেবা দেয়া
হবে। টিকা নেননি এমন কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন না। গণপরিবহন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ
জনবহুল এলাকায় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম আরও জোরদার
করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামপর্যায়ে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে।
গত
বছরের ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রথম ওমিক্রন আক্রান্ত দুই ব্যক্তির তথ্য জানা যায়। শনাক্ত
দুইজন ছিলেন জিম্বাবুয়ে-ফেরত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সদস্য। সেদিন স্বাস্থ্য
ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক রাজধানীর শ্যামলীর শিশু হাসপাতালে ভিটামিন ‘এ’
ক্যাম্পেইন উদ্বোধন উপলক্ষে দেয়া তার বক্তব্যে এ তথ্য জানিয়েছিলেন। জাহিদ মালেক তার
বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের নারী ক্রিকেট টিম ১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরেছে।
ক্রিকেট টিমের দুইজন সদস্যের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পুরো ক্রিকেট টিমকেই এখন
কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারা ভালো আছেন। তাদের কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি।’
এরপর বিদায়ী বছরের ২৭ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এর পরদিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর দেশে আরও তিনজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এর ঠিক দুই দিন পরই ৩১ ডিসেম্বর আরও তিন ব্যক্তির দেহে শনাক্ত হয় ওমিক্রন। বিদায়ী বছরে সব মিলিয়ে দেশে ওমিক্রন শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১০ জন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করছে, এই শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কেননা ইতোমধ্যেই আরও ১০ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হতে পারে বলে সন্দেহ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের নমুনা নিয়ে কাজও করছেন তারা। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ওমিক্রনে আক্রান্ত কি না তাও জানা যাবে।
দেশে
যখন নতুন করে ওমিক্রনে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে নতুন করে করণীয় কী হতে পারে,
এ বিষয়ে জানতে সিটি নিউজ ঢাকা কথা বলে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের
প্রধান ড. মাহবুবুল এইচ সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘ওমিক্রনের বিষয়ে
সচেতনতার জন্য নতুন কোনো ফর্মুলা আসলে নেই। কেননা দুই বছর ধরেই আমরা এই করোনার সচেতনতার
বিষয়গুলো সম্পর্কে জানি। তবে একটা কথা ওমিক্রন সম্পর্কে আমি বলতে চাই; তা হলো পৃথিবীর
কোথাও লকডাউন দিয়ে কেউ এই ওমিক্রন ঠেকাতে পারেনি। তাই আমাদের এখন টিকা দেয়ার বিষয়ে
বেশি জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বাজার রাখার বিষয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে
অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সবাইকে জোর
দিতে হবে। আমাদের দেশের জন্য লকডাউন আসলে কার্যকর পলিসি নয়।’
তবে দেশে এখনও অনেকেই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন নন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে ওমিক্রন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে অনেকের ওমিক্রন শনাক্তও হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে আমাদের যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো আছে, সেগুলোর অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। মাস্ক পরিধান করা, টিকা নেয়া, যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা- এ বিষয়গুলো আমাদের খুব ভালোভাবে মানতে হবে। তবে এই মহামারির সময়ে এসেও আমরা দেখছি, এখনও শতভাগ লোক স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানছেন না। অনেকের মাঝে এখনও মাস্ক পরা নিয়ে রয়েছে অনীহা; যা এই ওমিক্রন সংক্রমণের সময় একদমই উচিত নয়। যার ফলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’
দেশে
যখন ১০ জন ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে, ঠিক সে সময়ে এই পরিস্থিতি কিভাবে
সামাল দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিটি নিউজ ঢাকার পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন ছিল অধিদফতরের
মহাপরিচালকের কাছে। এর উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার
মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার পরে আর
নতুন কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনও ভাবা হয়নি। অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে আরও
ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আরও খানিক সময় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করব। সব সিদ্ধান্তই তো হয়
মন্ত্রিপরিষদ থেকে। লকডাউনের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা আমরা এখনও বলিনি।’
দেশে
ওমিক্রন পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের
এখন পর্যন্ত ১০ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। আরও ১০ জনের বিষয়ে আমরা সন্দেহ
করছি, যারা ওমিক্রন আক্রান্ত হতে পারেন। সেই সঙ্গে আরও ওমিক্রন বাড়ছে কি না তা দেখার
চেষ্টা করছি। তবে করোনায় আক্রান্তের হার আগের থেকে বেড়েছে, এটা ঠিক। নভেম্বর পর্যন্ত
আমাদের সব শনাক্তই ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ডিসেম্বরের ১১ তারিখ আমরা প্রথম শনাক্ত
করলাম ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে। আমরা এই মুহূর্তে ফ্রন্ট লাইনারদেরকে বুস্টার ডোজ
দিচ্ছি।’
ওমিক্রন
সংক্রমণের এই সময়ে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডা.
আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সেই
সঙ্গে করোনার টিকাও নিতে হবে। এর বাইরে তো আসলে আর কিছুই নেই করোনার সঙ্গে লড়াই করার
জন্য।’
রুমন/এম.
জামান