• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাণিজ্য মেলায় জাল টাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০৯:৪২ পিএম

বাণিজ্য মেলায় জাল টাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চলমান বাণিজ্য মেলাকে টার্গেট করে সারা দেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। সেই লক্ষে দেশব্যাপী ডিলারও নিয়োগ করা হয়েছিল। ঢাকার মিরপুর পল্লবীর একটি বাড়িতে ছগির হোসেন ও তার দল কম্পিউটারে প্রিন্ট করে এসব টাকা বানাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা ছগির হোসেনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এ সময় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, তিনটি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ছগির হোসেন, মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও রুহুল আমিন।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে আসছিল। চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতার ছগির হোসেন এবং অন্যরা তার সহযোগী। চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে। হোটেল বয় থেকে জাল টাকা কারবারে জড়ানো ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় আসেন। প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেন। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি শুরু করেন। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সময়েই ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামক এক জাল টাকা কারবারির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক ও জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়। ছগির প্রথমে জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সেসব তৈরির বিষয় রপ্ত করেন। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। বছরখানেক জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করেন। তৈরি করা জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিল।’

মূল হোতা ছগির নিজেই পুরান ঢাকা হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি কেনেন। তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ২টি টিস্যু পেপার একসঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করা হতো। তিনি নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করতেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর অন্য সহযোগীদের মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতেন।

প্রতি এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে ছগিরের খরচ হতো ৫-৬ হাজার টাকা। আর তিনি লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করতেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। তার সহযোগীরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করতেন। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতি মাসে তার সহযোগীদের বোনাসও দিতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ছগির জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করত। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছিল। সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। সম্প্রতি পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে ছগির। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সে জাল টাকা তৈরি করে আসছিল। ২০১৭ সাল থেকে ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল টাকা তৈরি করেছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ছগির জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সে জন্য ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন।

গ্রেফতার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছেন। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারের বিউটিশিয়ান। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূল হোতা ছগিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করেন।

গ্রেফতার রুহুল আমিন চক্রের মূল হোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমিনের মাধ্যমে ছগিরের অন্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন ও পাখি বিভিন্ন সময় ৫০০ টাকার জাল নোট বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেলসহ ব্যস্ত এলাকায় নিজেরাই বিক্রি ও এক্সচেঞ্জ করেছেন। জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে আরও বেশ কজন চক্রের সদস্যের নাম জানা গেছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে জাল টাকার উপকরণ বিক্রেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।’

জেডআই/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ