• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বেলা ১১টায় ওড়িশায় আঘাত হানবে ইয়াস, পূর্ণিমাই ভোগাবে বাংলাদেশকে

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২১, ০৯:১৪ এএম

বেলা ১১টায় ওড়িশায় আঘাত হানবে ইয়াস, পূর্ণিমাই ভোগাবে বাংলাদেশকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। বর্তমানে এর গতি রয়েছে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। বেলা ১১টার মধ্যে এটি ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানানো হয়েছে ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বুলেটিনে।

বুধবার (২৬ মে) সকাল ৬টার এই বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বেলা ১১টার মধ্যে ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ইয়াসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৩০-১৪০ কিলোমিটার। ওড়িশার ধামড়া পোর্ট থেকে ইয়াসের দূরত্ব মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। আর সমুদ্র সৈকত দিঘা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঝড়টি।

এদিকে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওড়িশায় আঘাত হানার আগেই সকাল থেকে ঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের উপকূলে। ভোর তিনটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের এর মতো। আমাদের পায়রা বন্দর যদি ধরি তাহলে এর দূরত্ব থাকবে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। ফলে কিছু অংশ বাংলাদেশের ভেতরে বা অগ্রভাগে পরবে। এসব এলাকায় দমকা হওয়াসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।’

তবে পূর্ণিমার কারণে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বাড়তে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। পূর্ণিমা মানেই সাগর আর উপকূলে পানির বিশৃঙ্খল আচরণ। জোয়ার থাকবে। স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে কয়েক ফুট। এর সঙ্গে যদি ঝড়ো হাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ের থাকে তাহলে তো কথাই নেই। ওই সময় সাগর ভয়ানক রূপ নেয়।

বজলুর রশিদ বলেন, ‘জোয়ার আর পূর্ণিমার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। এর ফলে এসব এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলের একাধিক এলাকায় ঝড়ের আঘাত লাগবে। এ সময়ে উপকূলের কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। ওই সময়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯১ সালে পূর্ণিমার সময়ে বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণিঝড় হয়। এতে অনেক জান-মালের ক্ষতি হয়। সুতরাং পূর্ণিমা এটা বড় সমস্যা। এছাড়াও অতীতের কয়েকটা ঘূর্ণিঝড় পূর্ণিমার সময় না হওয়ায় বেশ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।’

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপ এলাকার মানুষ।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামে এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

সবুজ

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ