প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২১, ০৯:১৯ পিএম
বছর বিশেক আগের কথা। শহরে তখন চুল দাড়ি কাটাতে খরচ হতো ১৫ টাকা। ঢাকার পশ্চিম
আগারগাঁও এলাকায় গোপাল চন্দ্র শীলের সেলুনে এসে চুল-দাড়ি কাটার খরচ জানতে চান একজন
বয়স্ক লোক। ১৫ টাকা লাগবে শুনে আক্ষেপের সুরে লোকটা বললেন, ‘কেন যে দেশটা স্বাধীন করলাম!’ এমন কথা শুনে
লোকটার পরিচয় জানতে চান গোপাল। জানতে পারেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার আক্ষেপভরা
সেই কথা গভীর দাগ কাটে গোপালের মনে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আজীবন বিনা মূল্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
চুল-দাড়ি কাটবেন।
সেই সিদ্ধান্তে আজও অটল আছেন গোপাল। গত ২০ বছরে প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধার চুল-দাড়ি কেটেছেন বিনা পয়সায়। শুধু তা-ই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, ঠিকানা, স্বাক্ষর এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথাও
তিনি টুকে রেখেছেন একটি স্মারক বইতে। গোপালের সেলুনে সংরক্ষিত সেই বই রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের খণ্ড খণ্ড অভিজ্ঞতার এক অসামান্য দলিল হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক
সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবিও সংগ্রহ করছেন গোপাল।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার গোপালের সেলুনে গিয়ে দেখা যায়,
দোকানের বাইরে সবুজ রঙের
সাইনবোর্ডে লাল রঙের বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চুল কাটা হয়’। সেলুনের ভেতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে জাতীয় চার নেতাসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার
ছবি টাঙানো আছে। নিয়মিত এসব ধুয়েমুছে রাখা হয় বলে জানালেন সঞ্জিত ও সুমন নামের
গোপালের দুই সহকারী। গোপালের মতো তারা দুজনও বিনা মূল্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চুল
কাটেন। তারা জানালেন, এই সেলুনে চুল
কাটাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সিরিয়াল লাগে না। অসুস্থ কিংবা বয়সের ভারে
ন্যুব্জ যেসব মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়োজনে তাদের
বাড়িতে গিয়েও চুল-দাড়ি কেটে দেয়া হয়। তবে সব মুক্তিযোদ্ধা যে বিনা মূল্যে চুল
কাটাতে আসেন তা নয়, খুশি হয়ে গোপালকে
আশীর্বাদ জানাতেও আসেন অনেকে। স্মারক বইটির পাতা ওলটালেই তার প্রমাণ মেলে, অনেক মুক্তিযোদ্ধাই গোপালের প্রশংসা করে
বইটিতে নানা কিছু লিখেছেন।
বিনা মূল্যে চুল কাটার কারণ জানতে চাইলে গোপাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে মানুষগুলো জীবনবাজি রেখে স্বাধীন দেশ এনে
দিয়েছেন; তাদের জন্য তো
তেমন কিছু করতে পারিনি। তাই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু করা যায়, তা করছি। এর বিনিময়ে কোনো প্রত্যাশা নেই। দেশ ও
দেশের সূর্যসন্তানদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই উদ্যোগ। চুল কাটার সময় মুক্তিযোদ্ধারা যখন তাদের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার গল্প বলেন, তা শুনতে ভালো লাগে।’