প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২১, ১১:৩২ পিএম
বরিশালগামী
লঞ্চের কেবিন থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ঘাতক স্বামী মো. মাসুদকে গ্রেফতার
করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কক্সবাজার শহর থেকে তাকে গ্রেফতার
করা হয়।
সোমবার (১৩
ডিসেম্বর) রাজধানীর র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাবের
মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান,
গত
১০ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটার পর সকল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে গুরুত্ব সহকারে
প্রচারিত হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব-৮, বরিশাল কর্তৃক লঞ্চের সিসিটিভি ফুটেজ
বিশ্লেষণপূর্বক বর্ণিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতারে ছায়াতদন্ত
শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
অপরদিকে ঘাতক
মাসুদের এলাকায় ঘটনাটির ব্যাপারে জানাজানি হলে সে আত্মগোপন করে। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭টি জেলার (বরিশাল,
মুন্সিগঞ্জ,
ঢাকা,
গাজীপুর,
নারায়ণগঞ্জ,
চট্টগ্রাম
ও কক্সবাজার) বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে। অবশেষে র্যাব গোয়েন্দা শাখার সহায়তায়
র্যাব-১৫-এর একটি আভিযানিক দল সোমবার ভোরে ঘাতক মাসুদকে কক্সবাজারের সুগন্ধা
সৈকত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাসুদ লঞ্চে তার
স্ত্রী শারমিনকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
খন্দকার আল মঈন
বলেন, ‘মাসুদ শারমিনকে বিয়ে করলেও তার সঙ্গে সংসার করার বিষয়ে আগ্রহী ছিল না।
কিন্তু শারমিনকে ডিভোর্স দিতে চাইলেও দেনমোহর বাবদ ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা
তার নেই। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ফলশ্রুতিতে ঘটনার ১৫-২০ দিন পূর্বে
শারমিনকে সে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার ৫ দিন
পূর্বে হত্যাকাণ্ডের শিকার শারমিন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। ঘাতক মাসুদ শারমিনের
এই অসুস্থতার সুযোগে তাকে কাশির সিরাপের সঙ্গে বিষপান করানোর পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাসুদ চার দিন পূর্বে আশুলিয়া বাজার থেকে চেতনানাশক একটি বোতল
ক্রয় করে। তারপর ঘাতক মাসুদ নিজে বরিশালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজ জমা দিতে যাবে
বলে শারমিনকে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে নলছিটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা
করতে থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির কথা চিন্তা করে বৃহস্পতিবার ৯ ডিসেম্বর মাসুদের সঙ্গে বরিশালে রওনা করার জন্য রাজি হয়। ৯ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে মাসুদ ও শারমিন
মিরপুর-১ হতে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসযোগে সদরঘাট যাত্রা করে।
মাসুদ আরও জানায়,
হত্যার
সময় যাতে শারমিনের আর্তচিৎকার কেউ শুনতে না পায়, সেজন্য
পরিকল্পিতভাবেই লঞ্চের লস্কর কেবিন ভাড়া নেয় সে। লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের পাশেই লস্কর
কেবিন অবস্থিত ছিল, যার ফলে কেবিনের ভেতরের কোনো শব্দ বাইরে থেকে
শুনতে পাওয়া অসম্ভব ছিল।
৯ ডিসেম্বর ২০২১
তারিখ রাত আনুমানিক ৯টার সময় লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এ সময়
মাসুদ তার সঙ্গে থাকা বিষযুক্ত কাশির সিরাপ শারমিনকে খাওয়ায়। বিষপান করার পর শারমিন তিন-চারবার বমি করে অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে যায়। অতঃপর তাকে জোরপূর্বক চেপে ধরে
অবশিষ্ট বিষ শারমিনের মুখে ঢেলে খেতে বাধ্য করে মাসুদ। অসহায় শারমিন তখন মৃত্যু
যন্ত্রণায় তার পা ছুড়তে থাকে।
কিছুক্ষণ পর
শারমিন সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে যায়। কেবিন বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে লঞ্চের
রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যায় মাসুদ। রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে কেবিনের সামনে
এসে দেখতে পায় যে, শারমিন কেবিনের দরজার ফাঁক দিয়ে বিষের বোতলটি
মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। ঘাতক মাসুদ তখন পানি দিয়ে কেবিনের দরজার সামনে পড়ে থাকা বিষ
পরিষ্কার করে পুনরায় কেবিনে প্রবেশ করে। যখন সে কেবিনে প্রবেশ করে তখনও শারমিনের
শ্বাস-প্রশ্বাস চলমান ছিল। ঘাতক মাসুদ তখন তার ব্যাগ থেকে শার্ট বের করে
নির্মমভাবে শারমিনের শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। লঞ্চ যখন চরমোনাই ঘাটে এসে
পৌঁছায়, তখন মাসুদ কেবিন থেকে বের হয়ে লঞ্চের দরজায়
অবস্থান নেয়। লঞ্চ বরিশাল শহরের ঘাটে এসে পৌঁছালে ঘাতক মাসুদ স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ
থেকে বের হয়ে সড়কপথে তার নিজের বাড়িতে যায়।
খন্দকার আল মঈন
আরও জানান, গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাওলাদার (১৯), ঝালকাঠি
জেলার নলছিটি থানার জলিল হাওলাদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
প্রক্রিয়াধীন আছে।
এস/এম. জামান