• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

সৌদিগামীদের জন্য কঠিন শর্ত, ভোগান্তির সঙ্গে অনিশ্চিত যাত্রা

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম

সৌদিগামীদের জন্য কঠিন শর্ত, ভোগান্তির সঙ্গে অনিশ্চিত যাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে সৌদি আরবের সরকার। তাই অন্য দেশ থেকে সৌদি প্রবেশে কঠিন শর্ত আরোপ করেছেন তারা। দেশটির এই শর্তের বেড়াজালে দিশেহারা সৌদিগামীরা। এসব শর্ত মানতে ভোগান্তির পাশাপাশি সৌদিতে প্রবেশ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভিনদেশিদের।

সৌদির নতুন এই কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে সৌদিগামী প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সৌদি সরকারের আরোপ করা শর্তের মধ্যে রয়েছে, নগদ প্রায় ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে বাধ্যতামূলক হোটেল বুকিং দিয়ে সেখানে গিয়ে সাত দিনের কোয়ারেন্টিন, দেশটিতে গিয়ে দুই দফা ৬ হাজার টাকা খরচ করে করোনা টেস্ট, বাধ্যতামূলক মেডিকেল ইনস্যুরেন্স। এ ছাড়াও ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাবশত করোনাভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৫ লাখ রিয়াল বা সোয়া কোটি টাকা জরিমানা, ৫ বছরের জেল, সৌদি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শর্ত।

শর্ত মেনে অনেক প্রবাসীর পক্ষে সৌদি আরব যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এসব শর্তের কারণে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শর্ত শিথিলের দেন-দরবারে কোনো লাভ হয়নি। তাই সৌদির শর্ত মেনেই সোমবার (২৪ মে) থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ফ্লাইট কমিয়ে সীমিত করা হচ্ছে।

গত ২০ মে থেকে নতুন শর্ত কার্যকর হওয়ার পর কর্মস্থলে ফিরতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সৌদি প্রবাসী যাত্রীরা। শনিবারও (২২ মে) শত শত যাত্রী রাজধানীর কারওয়ান বাজার সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে ভিড় করেন। হোটেল বুকিং না হওয়ায় অনেকেরই ফ্লাইট মিস হয়েছে। কখনো বিমানবন্দর আবার সেখান থেকে কারওয়ান বাজারে সাউদিয়া এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন সৌদি গমনেচ্ছুরা।

ধারদেনা করে অর্থ সংস্থানের মাধ্যমে কার আগে কে হোটেল বুকিং কিংবা টিকিট রিশিডিউল করবেন তা নিয়ে হুড়োহুড়ি চলছে। এয়ারলাইনস অফিসের সামনে ভিড় করা যাত্রীদের দাবি, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। হোটেল বুকিংয়ের অ্যাপস থাকা সত্ত্বেও নিজেরা হোটেল বুকিং দিতে পারছেন না, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। 

এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. শাহ ফয়সাল এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা সৌদি এয়ারলাইনসের হিসাব অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে জেদ্দার জন্য জনপ্রতি ৫৫ হাজার, রিয়াদ ৬৫ হাজার এবং দাম্মামের জন্য ৫৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছি। এটা কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য হোটেল ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ। প্রতি রুমে একজনকেই রাখা হবে।

প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার (২২ মে) বিকেলেও সৌদি এয়ারলাইনসের অনেক যাত্রীর হোটেল বুকিং হয়নি। হোটেল বুক করতে না পারায় অনেকেরই ফ্লাইট মিস হয়েছে। কারো বা শেষ হয়েছে করোনা সনদের মেয়াদ। 

এ দিকে, নতুন শর্ত আরোপের পর এয়ারলাইনগুলোর ফ্লাইট শিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ঢাকা থেকে সৌদি আরবের দাম্মাম, রিয়াদ ও জেদ্দা রুটে চলাচল করে বিমান। আটটি রুটে চলে সৌদি এয়ারলাইনস। এসব রুটের একমুখী প্লেন (ওয়ান ওয়ে) ভাড়া সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৭ হাজার টাকা। 

সৌদি সরকার নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টিনের খরচ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা, যা টিকিটের দামের চেয়েও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। একজন প্রবাসীকে সৌদি পৌঁছে নিজ খরচে একবার করোনাভাইরাসের টেস্ট করতে হবে। কোয়ারেন্টিনের ষষ্ঠ দিন আবার টেস্ট করাতে হবে। প্রতিবার ১২৯ সৌদি রিয়াল করে বাংলাদেশিদের দুই টেস্টে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা।

জানা গেছে, শর্ত পূরণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ও কারওয়ান বাজার এলাকায় অবস্থিত সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের অফিসে ভিড় করেন প্রবাসী কর্মীরা। যারা টিকিট কেটেছিলেন, তাদের অনেকেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় দেশটির পথে উড়াল দিতে পারেননি। এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে গিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, কোথায় হোটেল বুকিং দেয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হচ্ছে না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেছেন, ফ্লাইট শুরুর চার দিন আগে যাত্রী তালিকা দেয়া ও হোটেল বুকিংয়ের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে সৌদি আরবে অবস্থিত বিমান বাংলাদেশের স্টেশনগুলোর কর্মকর্তারা হোটেল বুকিংয়ের চেষ্টা করছেন। 

আমরা আশা করছি, একটি সমাধানে আসতে পারব। এদিকে, সৌদি আরব থেকে যারা বাংলাদেশে আসতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট কেটেছেন, তারাও বিপত্তিতে পড়েছেন। যাদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো, তারা অন্য এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে দেশে আসতে পারছেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তারা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

জেডসি/এসসি/এম. জামান
আর্কাইভ