প্রকাশিত: মে ২২, ২০২১, ০৯:৪৬ পিএম
সমাজ
তাকে বিচ্যুত করলেও অদম্য পথচলায় আটকে থাকেননি সঞ্জীবনী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স
ও মাস্টার্স করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে
নাচের শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এখন নিজের একটি দল নিয়ে
করোনায় মৃতদের দাফন-কাফন বা
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সৎকারের
দায়িত্ব পালন করছেন।
টাঙ্গাইলে
বাবা-মায়ের কোলজুড়ে আশিকুল ইসলাম নামে যে শিশুটি
বেড়ে উঠছিল, কিছুদিন পরই বোঝা গেল
তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার বা
লিঙ্গরূপান্তরিত নারী। তারপর সঞ্জীবনী নামে উঁচু-নিচু
পথচলা শুরু। এইচএসসি পড়া পর্যন্ত পরিবারের
সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু মানুষ যে শুধু তার
সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করত তা নয়,
সুযোগ পেলেই তার পরিবারের সদস্যদের
খারাপ কথা শুনিয়ে দিত।
নানাভাবে নাজেহাল করত। একসময় বাধ্য
হয়ে তিনি বাড়ি ছাড়েন।
সে-ও প্রায় আট
বছর হয়ে গেল। একমাত্র
বোন বা পরিবারের অন্য
সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, পড়াশোনার জন্য
আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন। শুধু তিনি বাড়ি
ফিরতে পারেন না। কারও সঙ্গে
দেখা করতে পারেন না।
জীবনের
বেশির ভাগ সময়ই মানুষের
কাছ থেকে বিরূপ আচরণ
পেয়ে আসা সঞ্জীবনী আজ
মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন। তিনি গত বছরের
মে মাস থেকে করোনায়
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশের দাফন-কাফন বা
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মৃত
ব্যক্তির সৎকারের দায়িত্ব পালন করছেন। দলনেতা
হিসেবেই তিনি কাজটি করছেন।
মৃত ব্যক্তির স্বজন থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলাসহ পুরো
কাজের সমন্বয় তিনিই করছেন। দলের সদস্য হিসেবে
লাশের গোসল, দাফনসহ অন্যান্য কাজেও হাত লাগাতে হয়।
সঞ্জীবনী
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত বান্দরবানের লামায় স্কুলের একজন নাচের শিক্ষক।
নিজে আগ্রহ করে করোনায় মারা
যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ সৎকারে এগিয়ে
এসেছেন। চট্টগ্রামে কিছুদিন কাজ করার পর
থেকে তিনি ঢাকায় কাজ
করছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পে থেকে কাজ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে কোথায় করোনায় রোগী মারা গেছেন,
সে তথ্য পেয়ে সঞ্জীবনী
তার দলের সদস্যদের নিয়ে
হাসপাতালে যান।
সঞ্জীবনী
বলেন, গত বছরের তুলনায়
বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। বর্তমানে
লাশের কাছে আসতে চান
না, এমন স্বজনদের সংখ্যা
কম। করোনায় মারা গেলে চারপাশে
মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল,
তা-ও অনেক কমেছে।
সঞ্জীবনী
বলেন, তিনি মুসলিম, হিন্দু,
বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান- এ
চারটি ধর্মে মৃতের শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায়
কী কী মানতে হয়,
তা শিখেছেন। মৃতের ধর্মীয় পরিচয় অনুযায়ী কখনো লাশ নিয়ে
যাচ্ছেন কবরস্থানে, কখনো যাচ্ছেন শ্মশানে।
তিনি বলেন, ‘কখন কে মারা
যাবেন বা কখন ডাক
পড়বে, তার কোনো ঠিক
নেই। তাই সেই অর্থে
তার কোনো অবসর নেই।
সব সময়ই প্রস্তুতি নিয়ে
রাখতে হয়। সুরক্ষিত পোশাক
পিপিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজগুলো করতে হয়।’
সঞ্জীবনী
নিজেকে নারী মনে করলেও
বর্তমানে তিনি পুরুষ দলের
দলনেতা হিসেবে কাজ করছেন। পুরুষদের
লাশ দাফন-কাফনে সহায়তা
করছেন। তিনি বলেন, ‘এ
দলে যারা কাজ করেন,
তাদের জন্য নির্দিষ্ট ড্রেসকোড
আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ
কাজ করতে গিয়ে মৃতের
স্বজন বা অন্য মানুষদের
কাছ থেকে কোনো বিরূপ
মন্তব্য শুনতে হচ্ছে না। কাজ করতে
তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতাও নেই,
বরং সবাই ভালোবাসা ও
কৃতজ্ঞতায় এ কাজের জন্য
মমতা দেখাচ্ছেন, ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।’
বকর/এম. জামান