প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২১, ০২:১৬ এএম
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক
বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বরখাস্তের পর তাদের বিরুদ্ধে
বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্ট যাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলেছেন, তারা হলেন- বেগমগঞ্জ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামান শিকদার, উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ও চৌকিদার আলী আসগর।
ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। আদালতে মতামত তুলে ধরেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল, রাশিদা চৌধুরী নিলু, তানজীম আল ইসলাম প্রমুখ।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। তিনি বলেন, তৎকালীন ওসি, একজন এসআই ও এএসআইকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং চৌকিদারকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে ৩৭ বছরের নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন। পরে ওই নারীকে হামলাকারীরা কুপ্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তারা ধারণ করা ভিডিও চিত্র ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়। এতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের নজরে আনলে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর নারীকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে ভিডিওটি সিডি বা পেনড্রাইভে কপি করে রাখার নির্দেশ দেন আদালত। বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি ওই ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা সমাজসেবা অফিসার এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে ওই ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে ১৫ কার্যদিবসের হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়েছে।
কয়েকটি আদেশের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জেডআই/এম. জামান