প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২১, ১০:০১ পিএম
সম্প্রতি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঝাউচরে একটি বাড়ির মালিককে
নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে ও
শ্বাসরোধে হত্যা করে নগদ টাকা,
স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে পালিয়ে যায়
একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এ ঘটনায় জড়িত
আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার দুজন
হলো- সুমন (২৩) ও শিপন
মিয়া (২০)। তারা
দুজন হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির ভাড়াটিয়া।
এর
আগে ওই বৃদ্ধার বাড়ির
এক ভাড়াটিয়া দম্পতি হারুন অর রশিদ ও
সুলতানা খাতুনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের
দেয়া তথ্যে বৃদ্ধা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সুমন
ও শিপন মিয়াকে রোববার
(১৬ মে) রাত সোয়া
৩টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম
পৌর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা
হয়। তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের
একটি চেইন, ঘড়ি, স্মার্টফোন ও
নগদ ১০ হাজার টাকা
জব্দ করা হয়।
সোমবার
(১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর
মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে
সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন,
গত ৮ মে রাতে
ঝাউচরে বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে (৭৫)
নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর অজ্ঞান করে
এবং তার স্ত্রী হোসনে
আরাকে (৬৪) হাত-পা
বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে
৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং
নগদ টাকা লুটের ঘটনা
ঘটে।
ওই
ঘটনায় বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনের ছেলে
আল আমিন বাদী হয়ে
ভাড়াটিয়া দম্পতিসহ অজ্ঞাতনামা দুজনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু
করে।
তদন্তকালে
সিআইডি জানতে পারে, প্রতারক চক্রের সদস্য সুমন ও শিপন
প্রথমে ওই বাড়ির একটি
ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে যায়।
তবে বাড়ির মালিকের স্ত্রী হোসনে আরা তাদের কাছে
বাড়িভাড়া দেননি। পরে চক্রের অপর
দুই সদস্য হারুন অর রশিদ ও
তার স্ত্রী সুলতানাকে পাঠানো হয়।
তারা
পরিকল্পনা অনুযায়ী চার মাস আগে
বাসাটি ভাড়া নেন। এই
চার মাসে সুলতানা বাড়ির
মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে
তোলেন। গত ৭ মে
রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বৃদ্ধ আজিমকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান তারা।
তবে তিনি না ঘুমিয়ে
উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই
রাতে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বৃদ্ধ আজিমকে
নিতে হয় হাসপাতালে।
পরদিন
আবারও একই কৌশলে বৃদ্ধ
আজিম উদ্দিনকে চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। তিনি ঘুমিয়ে
পড়লে রাতে চক্রের মূল
হোতা শিপন ও সুমন
ওই বাড়িতে যায়। তারা ঘরে
ঢুকে বৃদ্ধার হাত-পা বেঁধে
ফেলে। তার মুখও গামছা
দিয়ে বেঁধে ফেলে।
এরপরও
তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে
লাইট বন্ধ করে স্কচটেপ
দিয়ে তার মুখোমণ্ডল পেঁচিয়ে
ফেলে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।
সে সময় বাইরে হারুনের
স্ত্রী পাহারায় ছিলেন। তদন্তে নতুন ভাড়াটিয়া হারুন
ও তার স্ত্রীর সম্পৃক্ততা
পাওয়া যায়। পরে তাদের
গাজীপুরের জিরানী থেকে গ্রেফতার করা
হয়। তাদের বাড়ি রংপুর মিঠাপুকুরে।
জিজ্ঞাসাবাদে
তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা
স্বীকার করেছেন। সেই সঙ্গে আদালতেও
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ইমাম
হোসেন বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী শিপন
ও সুমন। টোপ হিসেবে হারুন
ও তার স্ত্রীকে ব্যবহার
করেছেন তারা। গ্রেফতার শিপন ও সুমন
জানিয়েছেন, হারুনকে ডাকাতির ১১ হাজার টাকা
দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের
এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম হোসেন বলেন,
চক্রের সদস্যরা মনে করেছিল, আজিম
উদ্দিনের ১৮-২০টি টিনের
ঘর, তাই ডাকাতদের ধারণা
ছিল অনেক টাকা পাবে।
এ ধারণা থেকেই তারা বাড়িতে ডাকাতির
পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ
হিসেবে তারা বাড়ির মালিকের
সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে।
গল্পগুজব
ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত চা খাওয়াতে ব্যস্ত
থাকেন দুজন। বাকি দুজন এ
সুযোগে লুট ও খুনে
ব্যস্ত ছিল। তবে ঠিক
কী পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা
লুট করেছে তা বৃদ্ধ আজিমউদ্দিনও
বলতে পারেননি।
ইমাম
হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে এমন
ঘটনা অসংখ্য আছে। ঢাকায় ১০-১২ লাখ বাড়ির
মালিক আছেন। ভাড়াটিয়া আছেন ৩০-৪০
লাখ। ভদ্রবেশী ভাড়াটিয়ারা মূলত পেশাদার অপরাধী
চক্রের সদস্য। এ ধরনের ঘটনা
এড়াতে বাড়ির মালিকদের আরও সতর্ক হওয়ার
অনুরোধ জানান তিনি।
লাইজুল/সিআর/এম. জামান