নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যায় সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি করা হবে তার স্বামী ও পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে। আর নতুন মামলার বাদী হবেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
বুধবার (১২ মে) ঢাকায় পিবিআই’র প্রধান কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মামলাটি নতুন করে পিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে কিছু বিষয়ে সন্দেহ জাগে। নতুন করে ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে নতুন কিছু মোড় এসেছে। তাই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা হবে। পুরনো মামলা আদালত থেকে বাতিল করা হবে। তাকে নতুন মামলায় আসামি করা হবে। এরপর মামলায় নতুন করে আবার তদন্ত শুরু হবে।
বনজ কুমার আরো বলেন, ‘নড়াইলে একটা লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নেই। তার নাম গাজী আল মামুন। আর বাবুলের বন্ধু সাইফুল হককেও আমরা নজরদারিতে নেই। এরপর তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনি। এরা দুজনই বাবুল আক্তারের বন্ধু। তারা বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে এবং নতুন মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হবে।’
বনজ কুমার আরো বলেন, ‘বাবুল আক্তার খ্যাতিমান পুলিশ অফিসার। তার স্ত্রীর মৃত্যুর আগে একটি জঙ্গি হামলার বা জঙ্গির ঘটনা ঘটে। সেখানে তিনি আহত হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। উদ্ধার করা হয় গ্রেনেড। এর কয়েকদিন পরই তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয় সন্তানের সামনে। সব কিছু মিলিয়ে এটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে পুরো দেশে। পুরনো মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন দুজন।’
বনজ কুমার বলেন, “বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন, কত দিন ঝুলে থাকবে। সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা অন্যদিকে মোড় নেয়। এখানে মুসা নিয়েই বড় প্রশ্ন হাতে এসেছে পিবিআই’র কাছে। পিবিআই জানতে চায় মুসা কে? বাবুল আক্তারের সোর্স মুসা। সে বাবুল আক্তারের বাসার বাজারও করে দিত। মিতু হত্যার সময় মুসাকে দেখা গেলেও তাকে চিহ্নিত করেনি বাবুল আক্তার। কিন্তু মুসা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করত।’
বনজ কুমার বলেন, ‘মামলার বাদীকে ইচ্ছা করলেই গ্রেফতার করা যায় না। বাদীকে গ্রেফতার করতে হলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। খুলশী থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে আজই কোর্টে যাচ্ছে পুলিশ। এটি দাখিলের পর নতুন মামলা হবে। মোশাররফ হোসেন বাদী হতে পারেন। কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে। তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম নিয়ে গেছে। নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি হবেন বাবুল আক্তার।’
পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে মুসাকে দেখা যায়। মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যেত। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিত। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে, মুসা সোর্স ছিল কি না। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। মৃত্যুর পর যে আচরণ, তা ছিল আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।’
বনজ কুমার বলেন, ‘পিবিআই বাবুলকে ঢাকায় ডেকেছিল। গত বৃহস্পতিবার বাবুল বলেন, উনি সোমবার ৯টায় আসবেন। বাবুল পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়।’ এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানায় পিবিআই।
পিবিআই প্রধান প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করার পর জানা যাবে কেন হত্যা করা হয়েছে মিতুকে। গ্রেফতার করার পর তাকে আমরা রিমান্ডে আনব। মুসাকে আমরা খুঁজছি। কিন্তু তাকে পাচ্ছি না। তাকেও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে।’
মুসা কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে বনজ কুমার বলেন, ‘আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। তাকে পেলে তো মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। আমরা বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মামলার নতুন মোড় দেখা দেবে।’
লাইজুল/এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন