প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২১, ০৩:৩৭ পিএম
যেভাবেই হোক কিশোর গ্যাং কালচারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
শনিবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির কারণ’ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
র্যাবপ্রধান বলেন, যেভাবেই হোক কিশোর গ্যাং কালচারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কোনোভাবে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। এর জন্য দরকার জনসচেতনতা।
র্যাব ডিজি বলেন, ২৭২ জনের বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে আমরা আটক করেছি। আমাদের অভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে একটা উইন্ডো খোলা থাকবে, যাতে কেউ চাইলে গ্যাং কালচার ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুর নির্মূলে আমরা অনেক কাজ করছি। সমাজের মূল ধারায় জলদস্যু ও জঙ্গিবাদে জড়িতদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অনেকে জলদস্যু ও জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সব কিছুতে ভালো কিছু করার সুযোগ আছে। ভালোটা নেব, না মন্দটা নেব সেটা আমাদের বিচার করতে হবে। আমরা কিশোরদের কাছ থেকে ভালোটা নিয়ে আসতে চাই, যার মধ্য দিয়ে গর্বিত বাংলাদেশ। আগামী দিনের প্রজন্মরা আমাদের গর্বিত অবস্থায় নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কিন্তু সমাজের নারী-পুরুষ কিশোর-তরুণ সবারই দরকার আছে। সবাই মিলেই আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, একসময় দেশের কিশোর-তরুণদের মধ্যে নানারকম খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর অপরাধ। তৈরি হচ্ছে গ্যাং কালচার। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাড়ায়-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হাতাহাতি, মারামারি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে কিশোর গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
তিনি বলেন, টিকটকসহ বিতর্কিত বিভিন্ন অ্যাপসের অপব্যবহারের মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে অনেক কিশোরী-তরুণীকে। আর্থিক প্রলোভনে ফেলে এসব কিশোরীদের তারকা বানানোর স্বপ্ন দেখানো হয়। নিচুমানের ও অশালীনতাপূর্ণ কন্টেন্টের বেশি ব্যবহার দেখা যায় টিকটক, লাইকিসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সুস্থ বিনোদন ও সমাজের ইতিবাচক চিত্র উপস্থাপনের জন্য অ্যাপসগুলো তৈরি হলেও এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে কিছু কিছু শিশু-কিশোর থেকে আরম্ভ করে বড়রা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নয়, ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা, শিথিল সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক বন্ধনের ঘাটতি, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, সন্তানকে সময় না দেওয়া, সামাজিক অবক্ষয়, সঙ্গদোষ, মাদকের সহজলভ্যতাসহ নানা কারণে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরত ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি বলে জানা যায়। এরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসেবন, অস্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে নানা দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে।
টিআর/ডাকুয়া