• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

রিমান্ডে বেরিয়ে এলো ইভ্যালির যেসব তথ্য

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ১১:৪৬ এএম

রিমান্ডে বেরিয়ে এলো ইভ্যালির যেসব তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বর্তমানে দেশের আলোচিত অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডের প্রথম দিন ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। এদিনের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন রাসেল।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে রাসেল দাবি করে বলেন, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি, প্রতারণার প্রশ্নই ওঠে না। গ্রাহক জেনেবুঝেই ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করেছেন, যারা ডেলিভারি পাননি ভবিষ্যতে টাকা পেয়ে যাবেন। এখানে প্রতারণার কোনো বিষয় ছিল না। ইভ্যালির প্রতিটি পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে শর্ত দেওয়া ছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল ‘স্টক থাকা পর্যন্ত। অনেক সময় স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি তাদের টাকা রিফান্ড (ফেরত) দিয়েছেন। অনেকের রিফান্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) এসব খবর জানা যায়। গ্রাহকদের টাকা আটকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল দাবি করেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ অর্ডার ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা (১০% অ্যাডভান্স) এবং ইভ্যালিতে কেনাকাটায় একের পর এক ব্যাংক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ইভ্যালির নগদ জমার পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়।

প্রতিশ্রুত পণ্য সময়মতো না দেওয়ার আরেক কারণ হিসেবে রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছে, কোনো গ্রাহক পণ্য অর্ডার করলে তাকে ওই পণ্যের ১০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাকি ৯০ শতাংশ টাকা গ্রাহক পণ্য পাওয়ার পর প্রদান করবেন। আমরা অনেকের কাছ থেকে অর্ডার নিয়েছি, সাপ্লাইয়ারকে অর্ডারের বিষয়ে জানিয়েছি। বেশ কয়েকজন সাপ্লাইয়ার ইভ্যালিকে ফুল পেমেন্ট ছাড়া পণ্য দিতে চায়নি। তাই ডেলিভারিগুলো আটকে গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন সেলার (সাপ্লাইয়ার) বলেছেন করোনাকালীন সময়ে অনেক পণ্যের ‘উৎপাদন বন্ধ ছিল, তাই তারা ইভ্যালিকে পণ্য দেয়নি। ফলে গ্রাহকদের সব পণ্য ডেলিভারি দেওয়া যায়নি।

পুলিশের তদন্ত সূত্র জানায়, ইভ্যালির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপারেশনাল পদে রাসেলের স্ত্রী (চেয়ারম্যান) শামীমা নাসরিনের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (টেকনিক্যাল) শামীমার বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ, মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান শামীমার বোন সাবরিনা নাসরিন, পরিচালক (পারচেজ অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) শামীমার বন্ধু আতিকুর রহমান। এছাড়া শামীমার দুই ভাগ্নে জাহেদ ও জুবায়ের মোটরসাইকেল বিক্রি সংক্রান্ত ডেলিভারির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ইভ্যালির অফিসে অভিযান পরিচালনা করেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি যাচাই-বাছাই করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার এসআই ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মসাৎ ও প্রতারণা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। আমরা তদন্তের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করছি যে রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কিনা। প্রাথমিক বিচার বিশ্লেষণ করেই একটা মামলা হয়। এখন অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে আমরা আত্মসাতের বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। আর টাকাগুলো যদি আত্মসাৎ করা হয়, তাহলে সেই টাকা এখন কোথায় আছে তা জানার চেষ্টা করছি। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদ রাসেলের আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেছিলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে আমরা সময় আবেদন করেছি। এ পর্যন্ত ৭০ লাখ গ্রাহককে সেবা দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল থেকে ৩ লাখ গ্রাহকের অর্ডার নিশ্চিত হয়েছে। আসামিকে জামিন দিলে, সব গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

আরিফ বাকের নামে এক ব্যক্তি ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করেন। পণ্যের জন্য আগাম অর্থ দিয়ে তা না পাওয়ার পাশাপাশি ‘প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয় মামলায়। মামলার বাদী আরিফ বাকের তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ইভ্যালির বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে তিনি ৩ লাখ ১০ হাজার টাকার পণ্যের অর্ডার দেন।

কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তাকে কোনো পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। ওই মামলা হওয়ার পর ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। রাতে র‍্যাব সদর দফতরে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন হস্তান্তর করা হয় গুলশান থানায়।

টিআর/ডাকুয়া

আর্কাইভ