ভোলা প্রতিনিধি
‘সামনে ঈদ আসতেছে। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’, আসন্ন ঈদ ঘিরে হতাশা নিয়ে এমনটাই বলছিলেন ভোলা খেয়াঘাটে বাঁধা এম ভি ভোলা লঞ্চের স্টাফ আব্দুল মান্নান।
ক্ষোভ ও আক্ষেপের সঙ্গে মান্নান বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধ। লঞ্চের মালিক ঠিক মতো বেতন দিতে পারে না। খাওয়া-দাওয়ায় অসুবিধা। সরকারি কোনো সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না। শুনছি প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসেবে শ্রমিকদের ২৫০০ টাকা করে দিচ্ছে কিন্তু আমরা সেই টাকা পাই নাই। সরকার বলছে ত্রাণ সবার ঘরে পৌঁছে দিবে। কিন্তু কোনো ত্রাণও পাই না। চেয়ারম্যান মেম্বার কোথাও ত্রাণ পৌঁছায় না।’
দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য রুটে যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম নৌপথ। প্রতিদিন নৌপথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ লঞ্চে করে ভোলাতে যাতায়াত করে থাকে। আর ঈদ মৌসুমে তার দ্বিগুণ মানুষ লঞ্চে বাড়ি ফিরে থাকেন। এই জেলার একটি বড় অংশের মানুষের জীবিকা এই লঞ্চকে কেন্দ্র করে হয়।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে ভোলা-ঢাকা রুটের সকল লঞ্চ বন্ধ থাকায় ঘাটগুলোতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। ফলে ঈদ মৌসুমে বিপাকে পড়েছেন নৌযানের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক ও ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় নৌ শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। এই দুর্দিনে মালিক পক্ষ কিংবা শ্রমিক সংগঠন কাউকেই পাশে পাচ্ছে না তারা। এমনকি তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সহায়তাও।
ভোলার মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন কম্পানির লঞ্চ কর্ণফুলী-১১-এর স্টাফ আবু সাইদ বলেন, ‘আমরা যারা লঞ্চ স্টাফ তারা দুইটা ঈদের আশায় থাকি। এ সময় অনেক যাত্রী লঞ্চে করে যাতায়ত করে থাকেন। সিট ভাড়া দিয়ে বা কাজ করে যাত্রীদের কাছ থেকে টিপস পাই। আবার মালিক ঈদ উপলক্ষে কিছু টাকা বোনাস দিয়ে থাকে। তাই দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করি। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছরও ঈদে লঞ্চ বন্ধ। তাহলে আমরা স্টাফ বা লঞ্চ শ্রমিকরা কীভাবে চলব।’
কর্ণফুলী-১১ লঞ্চের কোয়ার্টার মাস্টার মো. নুর উদ্দিন বলেন, ‘লঞ্চ চললে আমাদের সংসার চলে। আর লঞ্চ না চললে সংসারে খুব অসুবিধা হয়। সামনে তো ঈদ এই সময় ছেলে-মেয়েকে কিছু কিনে দিব তাও সম্ভব হচ্ছে না।’
ভোলা ইলিশা ঘাটের ইজারাদার সরোয়ারদি মাস্টার বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের ঘাট ইজারাদারে অনেক লোকসান হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে অনেক যাত্রী আসত, লঞ্চ ঘাট করলে আমারা ঘাটের টোল আদায় করতে পারতাম। কিন্তু তাও পারছি না। আমরা যারা ঘাটের ইজারাদার, করোনার কারণে আমাদের বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে। লঞ্চ ঘাটে শ্রমিকরা মালামাল উঠিয়ে-নামিয়ে অর্থ উপার্জন করত। এখন তারাও অলস সময় বসে আছে।’
মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন কম্পানির লঞ্চ মালিক মো. সালাউদ্দিন জানান, লঞ্চ ব্যবসা বন্ধ থাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না ঠিক মতো। এ অবস্থায় শ্রমিকদের সরকারি সহায়তা দেয়ার দাবি করেন তিনি।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ‘করোনার লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত নৌ শ্রমিক থেকে শুরু করে দিনমজুরসহ সকল শ্রমিকদেরকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব।'
ভোলা জেলার নৌপথে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের।
ডব্লিউএস/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন