• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

কাগজে কলমে আছে, বাস্তবে নেই!

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২১, ০৭:৩৬ পিএম

কাগজে কলমে আছে, বাস্তবে নেই!

জুনায়েদ আহমেদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। করোনাকালে দুই বন্ধুকে নিয়ে জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো দেখতে নিজ জেলায় আসেন তিনি। জেলার ওয়েবপোর্টাল দেখে প্রথমেই স্থির করেন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুইশ বছরেরও বেশি পুরোনো প্রাচীন মটকা মসজিদ দেখতে যাবেন। সেখানে আদায় করবেন পবিত্র জুমাতুল বিদার নামাজ। 

কিন্তু মটকা মসজিদ দেখে তিনি আক্ষেপ করে বলেন,‘ওয়েবে যেমন, বাস্তবে নেই তেমন। এত বছরের পুরোনো একটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলো, অথচ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে জেলার অন্যান্য স্থাপনাগুলোর কি অবস্থা তা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তিনি ও তার দুই বন্ধু।’

তিনি আরও বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, মটকার মতো দেখতে এক বিশালাকার গম্বুজ মাথায় নিয়ে ১২০৬ সনে জনৈক দুলুভ বানুর দানকৃত অর্থে মজুপুর গ্রামে স্থাপিত হয় মটকা মসজিদ। মসজিদের ভেতরে লতা-পাতার কারুকাজ সে সময়ের গ্রাম্য স্থাপত্যের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কিন্তু বাস্তবে এসে এখানে এর কিছুই দেখতে পাননি তিনি।

শুধু জাহিদ নন, এরকম আরও অনেক ভ্রমণ পিপাসুর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বলে জানালেন মটকা মসজিদ এলাকার বাসিন্দারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, মসজিদ কমিটির কয়েকজনের সিদ্ধান্তে প্রাচীন এ মসজিদটি সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলা হয়। এতে কী লাভ হলো?

জানা যায়, দুইশ বছরের পুরোনো এ মটকা মসজিদটি ছিল শহরের মজুপুর এলাকায়। ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন স্থাপনাটি সংস্কার করতে গিয়ে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ভেঙে ফেলা হয়। ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার তিন বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে গেছে। তবুও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ মসজিদের বাস্তবতা উল্লেখ করে তথ্য রাখা হয়েছে।  

শুধু তাই নয়, এ জেলা নিয়ে ব্র্যান্ডিং ‘সয়াবিনের লক্ষ্মীপুর’ নামে যে বই প্রকাশিত হয়েছে তাতেও এ মসজিদটিকে তার পুরোনো রূপেই দেখানো হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রাচীন এ স্থাপনাটি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।

স্থানীয়রা জানালেন, মটকা মসজিদটির কারণে এ এলাকা বেশ পরিচিত। দূর-দূরান্ত থেকে এ মসজিদটিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসতেন। মসজিদটি সংস্কার করতে গিয়ে এখন আর এ মসজিদের সেই জৌলুস নেই।

মসজিদ কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুসল্লি জানালেন, মটকা মসজিদটি সংস্কারের কথা বলে এটিকে আসলে ধ্বংস করা হয়েছে। এ নিয়ে কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালীর দাপটে কেউই কোনো কথা বলতে পারেনি।

এদিকে মটকা মসজিদ জেলার একটি পুরোনো ঐতিহ্য ও স্থাপনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানালেন, এটি সংস্কার বা সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তৎকালিন যারা দায়িত্বশীল ছিলেন বিষয়টি তাদের নজরে সম্ভবত আসেনি। ওয়েবসাইটে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে এর নাম এখনও উল্লেখ রয়েছে। তবুও বিষয়টি খোঁজ নেয়ার কথা জানালেন ডিসি।

এদিকে জেলার ঐতিহাসিক ও পুরোনো স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টিআর/এএমকে

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ