• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

শিশুটি চাইলো ভিক্ষা, ইউএনও দিলেন মমতার পরশ

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২১, ০৭:১৬ পিএম

শিশুটি চাইলো ভিক্ষা, ইউএনও দিলেন মমতার পরশ

জুনায়েদ আহমেদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

জুনায়েদ আহমেদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : দাফতরিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। হঠাৎ করেই তার রুমে ঢুকে পড়ল ছোট একটি শিশু। তার পরনে নোংরা কাপড়। জুতাও নেই পায়ে।

ইউএনওর রুমে ঢুকেই নতুন জামা কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরে ওই শিশু। এতে হতভম্ব হয়ে পড়ে রুমে থাকা উপস্থিত সবাই। তবে ওই শিশুটিকে খালি হাতে ফেরায়নি ইউএনও। প্রথমে খেতে দিলেন তাকে। এরপর কিনে দিয়েছেন নতুন জামা ও জুতা। নিজের গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছে তার বাড়িও। 

শিশুটির বাড়ি গিয়ে তার মায়ের হাতে ইউএনও তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার খাদ্যসামগ্রী। তাদেরকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ফিরে আসেন তিনি। 

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরীর নিজ কার্যালয়ে।

শিহাব নামের ওই শিশুর বয়স সাত। সে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরমোহনা এলাকার ইউসুফ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে সদর উপজেলার দালালবাজার এলাকার বাড়ির বাসিন্দা। অভাবের তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়েছে সে।

জানা যায়, শিহাবের বাবা সাতটি বিয়ে করেছেন। অনেক আগেই তাদের ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। শিহাবের মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। কাজ করে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। অভাবের তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছে শিহাব। কিন্তু ছেলে ভিক্ষা করুক এটি তার মা কখনো চায় না।

শিশু শিহাব জানায়, ঈদের নতুন জামার লোভে পড়ে সে সবার কাছে টাকা চেয়েছে। এ কথা শুনে তার পছন্দমতো শার্ট-প্যান্ট ও এক জোড়া জুতা কিনে দিয়েছেন ইউএনও। তাকে গাড়িতে করে বাড়িও পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এতে সে খুব খুশি।

শিশুটির বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থেকে ইউএনও সাবরীন চৌধুরী লিখেছেন, 'অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কার সঙ্গে এসেছো। এত ছোট বয়সে তুমি ভিক্ষাবৃত্তিতে কেনো নেমেছো। কে শিখিয়ে দিয়েছে, বাবা-মা কোথায়, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি। উত্তরে শিহাব জানাল, সে একাই এসেছে, বাড়ি রাখালিয়া, বাবা নেই, মার নাম জানে না।

খুব সকালে খেয়েছে, ক্ষুধা লেগেছে। শুনেই তাৎক্ষণিক তার খাবারের ব্যবস্থা করলাম। শিশুটিকে সামনে বসিয়ে হাতের কাজগুলো গুছানোর ফাঁকে মনে মনে চিন্তা করেছিলাম, কেমন মা? কোলের শিশুটিকে এই পেশায় নামিয়েছে, কী এমন অবস্থা যে তাকে একলা ছেড়ে দিতে হলো। শিশুটির কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। খারাপ লোকের খপ্পরে পড়তে পারত। মা তো নিজেও আসতে পারত।

এই শিশুটি বাড়ির ঠিকানা চেনে না, সে বাড়ি ফিরবে কীভাবে। আরও কত কী! তাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে যাওয়ার পর জানতে পারলাম, তার বাবা সাতটা বিয়ে করে এদের ফেলে রেখে চলে গিয়েছে। তার মা এদিক-সেদিক টুকটাক কাজ করে বেড়ায় কিন্তু ছেলে ভিক্ষা করুক তিনি তা চান না।

এএএম/এএমকে

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ