• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাজা থেকে বাঁচতে ২৯ বছর পালিয়ে ছিলেন আজাদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১, ০৫:০৯ পিএম

সাজা থেকে বাঁচতে ২৯ বছর পালিয়ে ছিলেন আজাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাজা থেকে বাঁচতে টানা ২৯ বছর পালিয়ে বেড়ান রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার আবুল কালাম আজাদ। গ্রেফতার এড়াতে ছাড়েন নিজ বাড়ি। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণশ্রমিক হিসেবেও কাজ করেন। সর্বশেষ তিনি রাজধানীর মিরপুরের আহম্মেদনগরে একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করছিলেন।

অবশেষে তিনি ্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন। তাকে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া থেকে গ্রেফতার করে ্যাব--এর একটি দল।

সোমবার ( সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত ্যাব--এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

্যাব জানায়, ২৯ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২৪ জুন রাতে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় জায়গা-জমির বিরোধে পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে খুন হন ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আবুল কালাম আজাদ।

বিভিন্ন যায়গায় পালিয়ে থাকতে বদলে ফেলেন নিজের নামপরিচয়। রংপুর থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য আজাদ মিয়া নাম পাল্টে মিরপুর থানার আহম্মেদনগরকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২৯ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২৪ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাজার থেকে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় খুন হন ভিকটিম মো. ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা। জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন মিলে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান ইব্রাহিম।

ইব্রাহিমের বড় ভাই মফিজ উদ্দিন মিঠাপুকুর থানায় আবুল কালাম আজাদসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ্যাবের হাতে গ্রেফতার আবুল কালাম আজাদসহ এজহারনামীয় তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে একই বছর ডিসেম্বর মাসে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এজাহারনামীয় বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেন।

পরবর্তী অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে চার্জশিটে অভিযুক্ত তিনজনকে ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল যাবজ্জীবন সাজা দেন।

রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফারাজ উদ্দিন (৫০) গ্রেফতার থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি আবু ডাকাত আবুল কালাম আজাদ পলাতক ছিলেন। পরে আবু ওরফে আবু ডাকাত গ্রেফতার হলেও আবুল কালাম আজাদ ছিলেন অধরা। আজাদকে গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট থানা চিঠি পাঠালে ্যাব- আজাদকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। সর্বশেষ সোমবার ( সেপ্টেম্বর) ভোরে মিরপুর পাইকপাড়া আহম্মেদনগর এলাকা থেকে আজাদকে গ্রেফতার করে ্যাব--এর একটি দল।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তিনি ১৯৮৭ সালে দাখিল, ১৯৮৯ সালে আলিম, ১৯৯১ ফাজিল পাস করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় টানা ২৯ বছর পালিয়ে কাটিয়ে দেন। ২০০৭ সালে আসামি নামপরিচয় গোপন করে তার পার্শ্ববর্তী বদরগঞ্জ থানার বাতাসন গ্রামে সাবানা (১৯) নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জানায় স্ত্রীর সঙ্গেও তার ছয় মাস পরেই বিচ্ছেদ ঘটে।

নিজেকে আড়াল করার জন্য আজাদ মিয়া নাম ধারণ করে মিরপুর থানাধীন আহম্মেদনগরকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রংপুর, মিঠাপুকুর গ্রাম গুটিবাড়ী কবিরাজ পাড়া ব্যবহার করেন।

সবুজ/এএমকে

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ