তুহিন জুবায়ের, মৌলবীবাজার প্রতিনিধি
গোলাপি চা বা ‘রোজ টি’। এই চায়ের আরেক নাম ‘কাশ্মীরি চা’। দিনকে দিন বিশ্বব্যাপী সুগন্ধি এ চায়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। গোলাপি বর্ণের এ চা অনেকের কাছেই অপরিচিত। কিন্তু দেশে এই প্রথম হবিগঞ্জের বৃন্দাবনপুর বাগানে এই চা উৎপাদিত হয়েছে। চা নিলামের প্রথম দিনেই উঠেছে এ চা-টি, যা তিন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বুধবার (৫ মে) সকালে করোনার মধ্যেই স্বল্পপরিসরে শ্রীমঙ্গলে বছরের প্রথম চা নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে ‘দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রে’ কার্যক্রমটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনে বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ হাজার কেজি; যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন নিলাম সংশ্লিষ্টরা। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ধশতাধিক বায়ার ও ব্রোকার হাউজ অংশ নেয়।
এই নিলামের আয়োজন করে ‘টি প্ল্যান্টার অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’। নিলাম নিয়ে সংগঠনটির পরিচালক হেলাল আহমদ বলেন, ‘আজকে নিলামের প্রথম দিন অতিবাহিত হলো। আজকে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে হবিগঞ্জের বৃন্দাবনপুর চা বাগানের ‘রোজ টি’র। এটির প্রতি কেজির দাম ওঠে তিন হাজার টাকা। বৃন্দাবনপুর বাগান কর্তৃপক্ষ ‘ব্ল্যাক টি’র পাশাপাশি ১০ কেজি ‘রোজ টি’ নিয়ে নিলামে অংশ নেন। যার সবটাই বিক্রি হয়েছে।’
নিলামে বৃন্দাবনপুর চা বাগানের ’ব্ল্যাক টি’সর্বনিম্ন ১৬২ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জোহর তালুকদার বলেন, ‘ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বছর শ্রীমঙ্গলে ২২টি নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
বিক্রিত চায়ের গড় দাম ১৮০ টাকা বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির এই নেতা।
‘রোজ টি’ সম্পর্কে বৃন্দাবনপুর চা বাগানের ম্যানেজার নাসির বলেন, ‘এই চা-এর বিশেষত্ব হচ্ছে গোলাপের ফ্লেভার। এ চায়ের লিকার খুবই সুন্দর হালকা গোলাপি কালারের। এ ছাড়া এ চা পান করতে গেলে নাকে গোলাপি সুগন্ধ ছড়াবে। আমরাই প্রথম দেশে এ চা নিয়ে এসেছি। এই চা প্রথমবার নিলামে বিক্রি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন নানা কালারের সুগন্ধি চা আবিষ্কার করে আসছে। তাদের ধারণা থেকেই আমরা এ ধরনের চা তৈরি করছি।’
দেশের ১৬৭ চা বাগানের মধ্যে শুধু মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি চা বাগান। এ অঞ্চলের উৎপাদিত চা দুবছর আগেও চট্টগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
গত বছর শ্রীমঙ্গলে ২১টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৯ কোটি ৭০ হাজার টাকার চা পাতা বিক্রি হয়েছিল। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে প্রতি নিলামে চা-পাতা উত্তোলন ও বিক্রি বৃদ্ধি হওয়ার আশাবাদী চা সংশ্লিষ্টরা।
এএএম/এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন