ওমর ফারুক, সাভার প্রতিনিধি
সাভারের আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানা আর এস অ্যাপারেলস। এক মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে শিল্প পুলিশের মধ্যস্থতায় শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে তারা বকেয়া বেতনও পরিশোধ করে। তবে রক্ত পানি করা শ্রমিকদের ওই বেতনে ভাগ বসান দুই শ্রমিক নেতা।
অভিযুক্ত ওই দুই নেতা হলেন- ‘জাগো বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন’-এর সভাপতি মামুন এবং ‘বাংলাদেশ রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’-এর সভাপতি জাহিদুর রহমান জীবন।
এ ঘটনায় গত ২৮ এপ্রিল ভুক্তভোগী শ্রমিকরা আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই গত ৬ এপ্রিল কারখানাটি বন্ধ করে দেয় আর এস অ্যাপারেলস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা শ্রমিক সংগঠনের সহযোগিতায় শিল্প পুলিশের কার্যালয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হেলাল সমস্যাটি সমাধান করার আশ্বাস দেন। তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া বেতনের তিন লাখ টাকা আদায় করেন। পরে ওই টাকা পরিশোধের জন্য শ্রমিক নেতাদের দায়িত্ব দেন।
গত ২৫ মে শ্রমিক নেতা জাহিদুর রহমান শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কথা জানিয়ে তার অফিসে আসতে বলেন। পরে শ্রমিকদের মাঝে এক লাখ ৯ হাজার টাকা বণ্টন করে দেন। আর বাকি এক লাখ ৯১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
ভুক্তভোগী শ্রমিক লাবণী বেগম বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের বকেয়া বেতনের তিন লাখ টাকা পরিশোধ করলেও শ্রমিক নেতা মামুন ও জীবন আমাদের টাকা কম দিয়েছে। তারা বাকি টাকা মাইরা খাইছে।’
‘আমরা কেউ কেউ মোটেও টাকা পাইনি। যেখানে আমরা ১০ হাজার টাকা পাবো, সেখানে তারা দিছে মাত্র ১৫০০ টাকা। এ ঘটনায় অনেক শ্রমিক কান্নাকাটি করে চলেও গেছে। আমি চাই প্রতারণাকারী শ্রমিক নেতাদের বিচার হোক এবং আমাদের পাওনা টাকা ফেরত দেয়া হোক’, বলেন লাবণী।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের এএসপি আব্দুল হেলাল বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করে শ্রমিক নেতাদের দিয়েছিলাম। তারপর নেতারা কী করেছে না করেছে আমি জানি না।’
এদিকে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন ওই দুই নেতা।
শ্রমিক নেতা মামুন বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নেইনি। জীবন তার অফিসে নিয়ে শ্রমিকদের টাকা দিয়েছে। কারখানার মালিক আমার পরিচিত হওয়ায় আমি সঙ্গে গিয়েছিলাম।’
তবে মামুনের এসব কথা অস্বীকার করে জীবন বলেন, ‘আমি ১৬ হাজার টাকা খরচ করেছি। ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু সেখানে পুলিশ আর মামুন এক লাখ ৯ হাজার টাকা শ্রমিকদের দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে আর এস অ্যাপারেলসের মালিক কামাল বলেন, ‘আমার কারখানার বড় ক্ষতি করেছে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। আমি শ্রমিকদের বলেছিলাম তোমরা তাদের কথা শুনে কারখানাটি বন্ধ করে যেও না। কয়েকটা দিন পরে সব বকেয়া আমি পরিশোধ করব। কিন্তু তারা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে কারখানাটি বন্ধ করিয়েছে। আমি শ্রমিকদের পাওনা তিন লাখ টাকা শিল্প পুলিশের মাধ্যমে ফেডারেশনের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। ফেডারেশন শ্রমিকদের টাকা দিয়েছে কি না আমি জানি না।’
শিল্প পুলিশ-১ এর এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক ঘটনাই তো আমার কাছে আসে। ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। তবে আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলাম। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এএএম/এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন