নরসিংদী প্রতিনিধি
রমজান মাসের শুরু থেকে নরসিংদীর বাবুরহাটে কাপড়ের দোকানগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। গত বছরের মতো এবার এই করোনা মহামারিতে ঈদের আগের সেই পরিচিত ভিড় আটকে গেছে লকডাউনে। ঈদকে ঘিরে এই হাটের মূল বেচাকেনার সময় চলে যাওয়ায় হতাশ বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদেও তাদের গুনতে হচ্ছে লোকসান।
শেখেরচর-বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতে আবার ২১ দিনের এ লকডাউনের ফলে নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞা জানান বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু খুচরা বাজারে দোকান বন্ধ থাকা ও দূরপাল্লার যানবাহন না পেয়ে পাইকারি ক্রেতা না আসায় জমেনি বেচাকেনা। এতে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, ব্যাংকঋণের সুদসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, দেশীয় বস্ত্রের প্রায় ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ করে থাকে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার শেখেরচর-বাবুরহাট। মূলত প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে এই হাটের ছোট-বড় পাঁচ হাজার দোকানে নতুন করে পসরা সাজানো হয় শাড়ি, লুঙ্গি, গজ কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থ্রিপিসসহ সব ধরনের দেশীয় কাপড়ের।
দেশে কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একাধিক শোরুম রয়েছে এখানে। এসব বস্ত্র কোম্পানির বেশির ভাগ কারখানাও গড়ে উঠেছে নরসিংদী-কেন্দ্রিক। দেশের অন্যান্য স্থানে প্রস্তুতকৃত যাবতীয় কাপড়ও পাওয়া যায় এখানে। প্রতি বছর রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঐতিহ্যবাহী এই কাপড়ের বাজারটিতে বেচাকেনা শুরু হলেও দুই বছর ধরে পাল্টে গেছে এই চিত্র।
আরটেক্স শাড়ি ঘরের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ রুমন বলেন, ‘মূলত বছরের দুই ঈদকে ঘিরেই এই হাটের বেচাকেনা বেশি হয়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশের জাকাতের কাপড় হিসেবে শাড়ি ও লুঙ্গির একটি বড় অংশ বেচাকেনা হয়। এ জন্য দোকানগুলোতে কাপড়ের আমদানি বেশি করা হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে বেচাকেনা না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
গজ কাপড় বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকে শার্ট পিস, প্যান্ট পিসসহ গজ কাপড় বেচাকেনা শুরু হয়। সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা এক মাস আগে থেকেই এসব কাপড় কিনতে আসেন। গত বছর ঈদে কিছুটা বেচাকেনা হলেও এবার লকডাউনে গণপরিবহন ও খুচরা দোকানপাট বন্ধ থাকাসহ পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বাবুরহাট।
শাড়ি কাপড় বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘নানান সমস্যার মধ্যেও মানুষের দেশীয় বস্ত্রের চাহিদা কমবেশি থাকে। সারা দেশে বেচাকেনা থাকলে শেখেরচর-বাবুরহাটেও থাকে। কিন্তু এ বছরের মতো বেচাকেনায় এমন ধস আর কখনও দেখিনি। ঈদকে ঘিরে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করে কাপড়ের পসরা সাজানো হলেও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে।’
থ্রিপিস বিক্রেতা আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ খুচরা কাপড় কিনতে আসছেন, কিন্তু পাইকারি ক্রেতার দেখা নেই। বাবুরহাটে বেচাকেনার এমন দশা অতীতে হয়নি।’
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাবুরহাটের দোকানগুলো খোলা হলেও পাইকারি ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। তবে অনলাইনের পাশাপাশি কিছুটা হলেও পাইকারি ও খুচরা বেচাকেনা হওয়ায় শ্রমিক বিলসহ প্রাথমিক খরচ মেটানো সম্ভব হবে।’
ডব্লিউ এস/এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন