
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১, ০১:৩০ পিএম
দিন যত যাচ্ছে কষ্টের ধরন পাল্টাচ্ছে। এখন আর আম্মার জন্য কান্নাকাটি
করি না। কিন্তু কষ্টটা ঠিকই বাড়ছে। কেন জানি না, এবার আমাদের তিন ভাই-বোনের ভীষণ খারাপ
লাগছে। এটা হয়তো থাকবে আজীবনই। কারণ, আম্মার এই মৃত্যু অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই মৃত্যুর
উত্তর আমরা আজও পাই না কেন? এই কেনোর উত্তরটা পাই না বলেই আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট
দেয়। কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়
নিহত আইভি রহমান দম্পতির বড় মেয়ে তানিয়া রহমান।
২০০৪
সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী
আইভি রহমান। পরে ২৪ আগস্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করেন তিনি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও তার স্ত্রী আইভি রহমানের পরিবারে এক
ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, দুই মেয়ে তানিয়া রহমান ও তনিমা রহমান।
মায়ের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সুখ-দুঃখের বিষয়ে তানিয়া বলেন, ‘নতুন করে কী আর বলব। আসলে কেমন লাগে বলা কঠিন। একই রকম লাগে। সবসময়ই নতুন লাগে মনে হয়, যেন ২১ আগস্ট আজকের ঘটনা। ১৭ বছর পার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের ভাই-বোন সবার কাছে মনে হয়, এই তো সেদিনের ঘটনা।’
তানিয়া
বলেন, ‘কেন হলো এমন ঘটনা? আমাদের মা সারা জীবন রাজনীতি করেছেন। কত মিছিল-মিটিং করেছেন,
টিয়ার গ্যাস-লাঠিচার্জ সবই তো খেয়েছেন। এই কেনোটার উত্তরও পাই না। আরেকটা কেনোর উত্তরও
পাই না যে, বিএনপি সরকার তখন যে আচরণ করেছে, সেটাই-বা কেন করেছে? মাকে একটু দেখতে দিলো
না। কাছে যেতে দিলো না। ভেন্টিলেটর খুলে ফেললো আমাদের না জিজ্ঞেস করে।’
বড়
ভাই নাজমুল হাসান পাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভাইয়া ভীষণ রকম মা-ভক্ত। আমার মাও ভাইয়াকে
বেশি পছন্দ করতেন। আমরা তিন ভাইবোনের মধ্যে মায়ের ভীষণ ভক্ত ছিল ভাইয়া (পাপন)। মায়ের
পৃথিবীর পুরোটাই ছিল ভাইয়া। মা পাগল ছিলেন ছেলের জন্য। ছেলেও ভীষণ পাগল ছিল মায়ের জন্য।’
তানিয়া
বলেন, ‘আম্মা কিন্তু বেশ শক্ত ছিলেন। আম্মার প্রকাশটা কম ছিল। ভাইয়ার প্রকাশটাও একটু
কম। কিন্তু ওনারা একজন আরেকজনকে বেশ বুঝতেন। ভাইয়া যে আম্মার সবকিছু—এটা ভাইয়া জানত। আবার আম্মা যে ভাইয়ার সবকিছু—এটা আম্মাও জানতেন।’
তানিয়া
আরও বলেন, ‘আম্মার মৃত্যুতে ভীষণ শক্ট আমার ছোট বোন। আমাদের কাছে এখনো বড় হয়নি তনিমা।
আম্মা বুঝতেনই না ও বড় হয়েছে! আমরাও বুঝতাম না। রোজ সকালে আম্মা ওর কাছে বেড-টি নিয়ে
যেতেন, ও ঘুমে থাকত। আম্মা ওর পায়ের কাছে বসে বসে বেড-টি খেতেন। পরে ও ঘুম থেকে উঠত।
আম্মার পুরো শখ্যটা ছিল তনিমার সঙ্গে। আম্মার মতোন তনিমাও খুব শৌখিন। সেদিনও তনিমার
সঙ্গে দুপুরে একসঙ্গে খেলেন আব্বা-আম্মা। খেয়ে তারা মিটিংয়ে গেলেন। তারপর এই ঘটনা
‘
তনিমা রহমান বলেন, ‘আমার সঙ্গে আম্মার সম্পর্ক মা-মেয়ের মতো ছিল না। অনেকটা বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। আমার ওপর ভীষণ ডিপেন্ড করতেন তিনি। পারিবারিক সকল ক্রাইসিস আমিই জানতাম আগে। ভাইয়া খুবই চাপা। কিন্তু খেয়াল করেছেন কিনা জানি না। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে আম্মার জন্য যে অনুষ্ঠান করলাম, তখন ভাইয়াকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আম্মার সম্পর্কে যেকোনো কিছু জানতে বা জানাতে ভাইয়া কিন্তু না কেঁদে কথা বলতে পারে না। হাউমাউ করে কাঁদে। বাচ্চাদের মতো।’
তিনি
আরও বলেন, ‘এজন্য আম্মা সম্পর্কে পাপন ভাইয়া কোথাও কোনো স্মৃতিচারণ করতে চায় না, ভাইয়া
তা পারে না। আমরা যেমন সাধারণভাবে কথা বলি ও তা পারে না। তাই আম্মা সম্পর্কে কারও সঙ্গে
কথাও বলতে চায় না। অনেকেই ভাবে কেন বলে না। আসলে ভাইয়া পারে না। ভাইয়ার পক্ষে স্বাভাবিকভাবে
কিছু বলা সম্ভব না।’
২১
আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার সম্পর্কে তানিয়া বলেন, ‘হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের বিচার
হয়েছে। এ হামলার পেছনে যারা ছিল তাদের শাস্তি দেখতে চাই। আমরা চাই আসল বেনিফিশিয়ারি
যারা, তারা সামনে আসুক। সরকার তাদের খুঁজে বের করুক।’
সবুজ/এএমকে