সিটি নিউজ ডেস্ক
নদীকে তার জমি ফিরিয়ে দিতে শুধু ঢাকা বা এর আশপাশের এলাকা নয়, দেশব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় নামছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নদীরক্ষা কমিশন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা ধরে রাখতে ডেল্টা প্লানের আওতায় ১৭৮টি নদী নিয়ে কাজ করছি আমরা। নদী ও নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্যই নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নদীর দখল ও দূষণ রোধে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন ইতোমধ্যেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করেছে। দেশব্যাপী এসব কমিটি এবং জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকাও আমরা হাতে পেয়েছি। তবে দেশব্যাপী উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও এসব কাজে প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন হয়। তারপরেও আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য নদীকেন্দ্রিক। উচ্ছেদ কাজ করতে গিয়ে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা কাজ করছি। তারপরেও আমরা নদীকে নদীর জায়গা ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। তবে আমরা আরও একটা বিষয়ে কাজ করছি, সেটি হলো উচ্ছেদকৃত জায়গা যাতে পুনরায় দখল করতে না পারে। এজন্য নদীর তীরে বনায়নে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘দেশব্যাপী নদীর দখলকারীদের উচ্ছেদে পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। তবে এখন আর আমাদের উচ্ছেদ অভিযান ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। আমরা ইতোমধ্যে আশুলিয়া নৌ বন্দর, শিমুলিয়া নৌ বন্দর, নওয়াপাড়া নৌ বন্দরে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্সবাজার এবং টেকনাফের নদীবন্দর এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে যেসব এলাকায় নৌবন্দর রয়েছে সেসব জায়গায় আগে অবৈধ উচ্ছেদ পরিচালনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব এলাকায় আমাদের নদীবন্দর নেই সেসব এলাকায় আমরা জেলা প্রশাসক এবং জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সহায়তা নিয়ে উচ্ছেদ কাজ পরিচালনা করব।’
জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে নদী দখলদারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৪৯ জন। যা ২০১৯-এ ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০ জন।’ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের ছোট নদী, খাল ও জলাশয়ের ৪৫ হাজার ৯৫টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮০২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও এখনও বাকি রয়েছে ২১ হাজার ২৯৩টি অবৈধ স্থাপনা।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার সম্প্রতি জানান, তালিকা করে একাধিক পর্যায়ে আমরা ২৩ হাজার ৮০২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। আমাদের উদ্ধার করা জমির পরিমাণ ১০২৭ একর জমি। কিন্তু মহামারি করোনায় উচ্ছেদ কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতিতে চলে। আগামি ৩০ মার্চ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু হবে। উচ্ছেদ করা জায়গায় সামাজিক বনায়ন করা হবে।
এএম
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন