প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১, ০৮:৫৬ পিএম
ছোট ভাইকে হত্যার
ঘটনায় ১২ বছর বয়সী
বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জোর
করে স্বীকারোক্তি আদায় তদন্ত কর্মকর্তার
মারাত্মক অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন
হাইকোর্ট। রোববার (২২ আগস্ট) বিচারপতি
জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো.
আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এ
বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনে অসন্তোষ জানিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬
সেপ্টেম্বর দিন রেখেছে আদালত।
‘দুই পুলিশের ভুলে
১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ছোট ভাই
হত্যার দায়’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় সংবাদ
প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ
সংযুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন
করেন মোহাম্মদ শিশির মনির।
ওই
আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত মামলার
তদন্ত কর্মকর্তাদের তলব করেন। আদালতের
আদেশে রোববার সকালে তদন্ত কর্মকর্তা (পিবিআই) মুনসুর আলী এবং সাবেক
তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আদালতে
হাজির হন। এ সময়
তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আদালতের
কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শুনানিতে
রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, পুনরায় তদন্ত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন
করেছে। যেটা সহজে দেখা
যায় না। সাধারণত দেখা
যায় পিটিশনাররাই পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। কিন্তু এ মামলায় দেখা
যাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষই আবেদন করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এখন তার আবেদনে
আপনারা যদি সন্তুষ্ট হন
তাহলে তাকে ক্ষমা করে
দিতে পারেন।
এ
সময় আদালত বলেন, উনি যদি ভুল
করেন তাহলে তাকে কী আমরা
ছেড়ে দেব?
তখন
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেটা আপনাদের বিবেচনার
ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আমি
বলতে চাচ্ছি, হি অলসো পার্ট
অব দ্য প্রসিকিউশন। তিনি
যে ভুল করেছেন, সে
ভুলের জন্য তিনি নিঃশর্ত
ক্ষমা চেয়েছেন।
তখন
আদালত বলেন, এটা মারাত্মক অপরাধ,
যেটা তিনি করেছেন। তিনি
এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করেছেন। ১২
বছরের একটি শিশুর স্বীকারোক্তি
দিয়ে বলেছে ‘আমি আমার ভাইকে
মেরে ফেলেছি।’ এটা কী সম্ভব?
১২ বছরের একটি ছেলে ৮
বছরের একটি ছেলেকে মেরে
ফেলবে?
পরে
আদালত এ বিষয়ে শুনানির
জন্য আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দিন
ঠিক করে দেন। সেদিন
সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমারকে আদালতে
হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
জানা
যায়, ২০১৫ সালের ২৫
আগস্ট ৮ বছরের শিশুর
মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর বগুড়ার সারিয়াকান্দি
থানায় মামলা করেন ওই শিশুর
বাবা মহিদুল ইসলাম। পুলিশ ওই বছরের ২৯
নভেম্বর বাদীর ১২ বছরের ছেলেকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে
যায়। পরদিন বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা
হয়। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে
তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায়
তাকে খুন করেছে বলে
ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায় বড় ছেলে। পরে
আদালত তার জামিন মঞ্জুর
করেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে। কিন্তু সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।
মহিতুলের
অভিযোগ, ‘খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুস
নিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে
বাধ্য করেছে।’
পরে
প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার বড়
ভাইকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু মহিদুল ইসলাম এতে নারাজি দিলে
২০১৭ সালে পুলিশ বুয়রো
অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।
পিবিআই
চার বছরে তদন্ত শেষে
বড় ছেলেকে নির্দোষ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ছাড়া
হত্যার ঘটনায় অন্য দুইজনকে গ্রেফতার
করে পিবিআই। এ অবস্থায় এসআই
মনসুর আলী ১২ বছর
বয়সি বড় ভাইকে অব্যাহতি
দিয়ে নতুন দুই আসামির
বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
জেডআই/নির্জন