
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ০৪:১৩ পিএম
২১ আগস্ট, বাংলাদেশের
ইতিহাসে একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। আগামীকাল নারকীয় এই সন্ত্রাসী হামলার ১৭তম
বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই
গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে এই ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়।
ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম
রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের মহিলা
বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন
নেতাকর্মী। পরবর্তী সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট
সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। প্রমাণ হয় তৎকালীন
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল।
বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের
জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী পালন করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক
ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে কর্মসূচি অন্যান্য
বছরের তুলনায় কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ
ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী
ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন শেখ হাসিনা। এরপর ট্রাক থেকে নামতে গেলেই তাকে লক্ষ্য
করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়।
বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের
পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই
মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে।
প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অঙ্গ ছিন্নভিন্ন হয়ে চার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ
আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে
শত শত মানুষের গগনবিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ
অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।
সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের
তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে
যান শেখ হাসিনা। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য
করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে
বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে
যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে।
২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই
নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল
গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ,
হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ
ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল
হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল
কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের
স্প্লিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।
হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী
গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই
গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে
চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
এ দিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা
ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।
হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে
পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি চার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
একই সঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই লোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা
ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : গ্রেনেড হামলায়
নিহতদের স্মরণে শনিবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে।
এ ছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টায় ২১ আগস্টের
নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী
লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায়
সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
সবুজ/এম. জামান