খুলনা ব্যুরো
‘মা, আব্বা, তোমরা আমাকে কেন নিয়ে গেলে না, আমি এখন তোমাদের কোথায় পাবো, কে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে, আমি কার কাছে থাকব।’ এমন আরও অনেক কথা বলে থেকে থেকে কেঁদে উঠছে ছোট্ট মীম। মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার হারিয়েছে সে। বাবা-মা ও ছোট দুই বোনকে হারিয়ে হয়ে পড়েছে একেবারে অসহায়।
মায়ের মৃত্যুর খবরে ঢাকার মীরপুর থেকে সপরিবারে খুলনা রওনা হয়েছিলেন মীমের বাবা মনির শিকদার। সঙ্গে ছিল স্ত্রী আর তিন মেয়ে। স্পিডবোটে পার হওয়ার সময় মাদারীপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এতে মনির শিকদার, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিহত হন। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেন একমাত্র ৯ বছরের মেয়ে মীম। এতে তাদের গ্রামের বাড়ি তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মঙ্গলবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় জানাজা শেষে মা লাইলী বেগমের কবরের পাশে মনির শিকদারসহ পরিবারের বাকিদের দাফন করা হয়।
এর আগে একসঙ্গে একই পরিবারের এতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেনি তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামের মানুষ। এমন শোকাবহ পরিস্থিতিতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম।
নিহত চারজনের জানাজায় যোগ দেয় পারোখালী গ্রামসহ এলাকার সর্বস্তরের হাজারো মানুষ। পরে সারিবদ্ধভাবে তাদের মরদেহ দাফন করা হয় একদিন আগে মৃত্যু হওয়া মনির শিকদারের মা লাইলী বেগমের কবরের পাশে।
আগের দিনই মৃত্যু হয় মনির শিকদারের মায়ের। পরদিন চলে গেছেন পরিবারের চারজন সদস্য। বাবা মনির শিকদার, মা হেনা বেগম, ছোট বোন সুমি (৭) ও রুমিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে শিশু মীম। পরিবারে এখন আর কেউই নেই তার। অবুঝ এই শিশুকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। এই শিশু এখন কীভাবে থাকবে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে- এ নিয়ে স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
মীমের ছোট চাচা কামরুজ্জামান জানান, রোববার রাতে তার মা লাইলী বেগম (৯০) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজের ইলেকট্রনিক্স শোরুম বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। আর সোমবার সাহরি সেরে ঢাকার মিরপুর থেকে তেরখাদায় বাড়ির উদ্দেশ্যে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ফিরছিলেন ভাই মনির শিকদার।
তিনি বলেন, ‘মা-বাবা ও দুই বোনকে হারিয়ে শিশু মীম এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। জানাজার পর তাকে তেরখাদার পানতিতায় তার নানা বাড়ি রেখে এসেছি।’
তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে মীমের জন্য এক লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মীম বড় হওয়া এবং তার বিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করব বলে এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা দিয়েছি।’
ডব্লিউএস/এম. জামান/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন