প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম
ট্রেনগুলো যাবার সময় ধাতব স্লিপারের সঙ্গে ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন হয় এবং ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। এই কম্পন মূলত সৃষ্টি হয় ইপিডিএম তথা ইথিলিন প্রপিলিন ডাইন মনোমার রবারের কারণে। এতে করে রেললাইনই সরে যেতে পারে নিজ জায়গা থেকে। এতে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এবড়ো খেবড়ো এই পাথরগুলো রেললাইনকে নড়তে বা বিচ্যুত হতে দেয় না।
ধরুন, আপনি প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। কিংবা রেললাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন রেললাইনের স্লিপারের মাঝে আছে অসংখ্য পাথরের টুকরা।
তবে স্লিপারের মাঝের ফাঁকা জায়গায় পাথর ফেলা হয়েছে মনে করলে ভুল করবেন। আসলে পাথর ফেলে তার ওপরই বসানো হয়েছে রেললাইনের স্লিপার!
কিন্তু এমনটা কেন করা হয়? আছে বেশকিছু কারণ।
ট্রেনগুলো যাওয়ার সময় ধাতব স্লিপারের সঙ্গে ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন হয় এবং ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। এই কম্পন মূলত সৃষ্টি হয় ইপিডিএম তথা ইথিলিন প্রপিলিন ডাইন মনোমার রবারের কারণে। এতে করে রেললাইনই সরে যেতে পারে নিজ জায়গা থেকে। এতে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এবড়ো খেবড়ো এই পাথরগুলো রেললাইনকে নড়তে বা বিচ্যুত হতে দেয় না।
এ ছাড়া, রেললাইনকে মাটি থেকে উপরে রাখা ও আগাছা থেকে রক্ষা করার ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাতের মতো ঘটনাগুলোয় মাটিতে পানির সেচন ঘটতে পারে। আর এটি ঘটলে রেললাইনের নিচে থাকা মাটিতে জন্মাবে আগাছা। আর আগাছা বড় হলে কী হবে তা আপনারা সহজেই বোঝেন। সেই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্যেও রেললাইনে পাথর ব্যবহার করা হয়।
তাহলে কাজটি করা হয় কীভাবে? খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয় আসলে। রেললাইন যেখানে পাতার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, সেখানকার মাটিতে গ্রানাইট পাথর টুকরো টুকরো করে স্তরীভূতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেই পাথরের স্তরের ওপর রেললাইনের স্লিপারগুলো ফেলে লাইন পাতা হয়। এর মূল কারণ, রেললাইনকে মাটি থেকে উঁচুতে রাখা। তাতে, বৃষ্টি বা বন্যার সময় রেললাইন ডুবে যাওয়ার কিংবা আগাছা জন্মানোর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
রেললাইনে ফেলা পাথরগুলোকে বলা হয় `ট্র্যাক ব্যালাস্ট।` এগুলো মূলত গ্রানাইটের টুকরো৷ তবে এদের ভাঙার সময় এমনভাবে ভাঙা হয় যেন এদের প্রান্তীয় দিক গোলাকার না হয়ে ধারালো হয়, মসৃণ না হয়ে অমসৃণ হয়। এর ফলে যে সুবিধাটা হয়, তা হলো মাটিতে ছড়ানো এই টুকরোগুলো নিজেদের ভেতর ঘর্ষণের ফলে ওভারল্যাপ করে না বা একে অন্যের ওপর এসে পড়ে না। ফলে `ইন্টারলকিং` এর মাধ্যমে এদের আটকে রাখা হয় ও এদের স্থানচ্যুতি ঘটে না।
এই পাথরের টুকরোগুলোর স্তরের ওপর নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো হয় কাঠের বিম। এই বিমগুলো লম্বভাবে বসানো হয়, অর্থাৎ, স্লিপারের সঙ্গে সমকোণ (৯০ ডিগ্রি) তৈরি করে। এর ফলে আটকে থাকে রেললাইন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন স্লিপারের পাশাপাশি বিমের ক্ষেত্রেও কাঠের পরিবর্তে ধাতব পদার্থের প্রচলন হয়েছে। তবে এদের মাঝে থাকা অমসৃণ- ধারালো প্রান্তের গ্রানাইটের টুকরোগুলোই মূলত টেকসই করে রেখেছে রেললাইনকে। তাই রেললাইনে স্লিপারের ফাঁকে পাথর দেখলে তা মোটেও অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন না।
জেকেএস/