• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিশ্ব নৃত্য দিবস শনিবার

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ১০:১০ পিএম

বিশ্ব নৃত্য দিবস শনিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিশ্ব নৃত্য দিবস আজ শনিবার (২৯ এপ্রিল)। নৃত্য বা নাচ মানুষের মনোজাগতিক প্রকাশভঙ্গি। কেননা, নৃত্য ও এর ভাষা কাজ করে একসূত্রে। নাচের মাধ্যমেই সহজে মনের আবেগকে তুলে ধরার গুরুত্ব থেকে দিবসটি সারাবিশ্বে উদযাপন করা হয়।

সারা বিশ্বে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হয়। দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয় ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জর্জ নভেরের জন্মদিনে। ইউনেস্কো ১৯৮০ সালে তার জন্মদিন ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ঘোষণা করে। তখন থেকে পৃথিবীব্যাপী এ দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হয়।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কাউন্সিল বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা যৌথভাবে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের অনুষ্ঠান পালন করে।

জ্যঁ জর্জ নভেরের অবদানের স্বীকৃতির মাধ্যমে একদিকে যেমন নৃত্যের জন্য বিশেষ একটি দিন নির্ধারিত হয়, তেমনি এই গুণী শিল্পীকেও শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ তৈরি হয়।

যেকোনো দেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রেরণা হয়ে কাজ করে সে দেশের সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মাধ্যমেই মানুষ বৃহৎ পরিসরে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই একজন মানুষের যেমন, তেমনি একটি জাতির রুচিবোধেরও পরিচয় মেলে। সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়েই সংহতি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতার বন্ধন তৈরি হয়।

সব সংস্কৃতির আদি জননী হচ্ছে নাচ বা নৃত্য। নাচ সাংস্কৃতিক শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। ফলে গবেষণা ও শিক্ষার উপাদান হিসেবে সারা বিশ্বেই নাচের জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাচ মানুষের মেধা ও মননকে বিকশিত করে। নাচে দেহভঙ্গিমার মাধ্যমে শৈল্পিকভাবে পার্থিব ও অপার্থিব সব ভাবকে মানুষ প্রকাশের সুযোগ পায়। এ প্রকাশভঙ্গিতে থাকে গতি ও ছন্দ। সেই গতি ও ছন্দের তালে তালে ফুটে ওঠে প্রেম, ভালোবাসা, রাগ, অনুরাগ, প্রতিবাদ। সমাজ কিংবা গল্প-ইতিহাসের কথাও নাচের মাধ্যমে উঠে আসে। নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যায় জীবনের কথা, চাওয়া-পাওয়া বা না-পাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে নাচ শুধু বিনোদনমাত্র নয়, নাচ জীবনের প্রতিবিম্বও।

বিশ্ব নৃত্য দিবসের ইতিহাস

১৭২৭ সালের ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নৃত্য সংস্কারক জ্যঁ জর্জ নোভের জন্মগ্রহণ করেন প্যারিসে। তিনি ১৭৫৪ সালে ব্যালে নৃত্য আবিষ্কার করেন। নৃত্য সংস্কারক হিসেবেও ছিল তার খ্যাতি। নভেরে নৃত্যকে ক্ষুদ্র গণ্ডি ও সংকীর্ণতা মুক্ত করে অপেরায় উন্নীত করেন। এর পর ১৭৬০ সালে রচনা করেন ‘লেটারস অন দ্য ড্যান্স’ গ্রন্থ।

নোভের ব্যালে রচনার পাশাপাশি ব্যালের বিন্যাস, নির্দেশনা, পোশাক সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল নৃত্যশিল্পী, বাদক, শিল্পনির্দেশক সবার সমন্বয়। সেসব রীতি আজও বহাল আছে।

‘ব্যালের শেক্সপিয়ার‍‍` হিসেবে পরিচিত নোভেরের মোট কম্পোজিশন ১৫০টি। ওই সময় তার কম্পোজিশন পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। নোভেরের ব্যালের ব্যাপক পরিমার্জন করেন ইতালির নৃত্যবিদ ডাবরভেল ও সেলভেটর ভিগেনোর। তবে তাদের শিক্ষক নৃত্যবিদ কার্লো ব্লাসিস নোভেরের সৃষ্টিকে সুমহান মর্যাদা দিয়েছিলেন।

১৭০০ সালের মাঝামাঝি নোভের প্রভাবিত হয়েছিলেন ম্যারি সেলের প্রতি। ব্যালের ক্ষেত্রে ম্যারির স্বাধীন ধারণা এবং আবেগীয় গুরুত্ব তাকে আকর্ষণ করেছিল। ফ্রান্স-বিপ্লবের পর তিনি লন্ডনে এসে কিংস থিয়েটার সেমিনারে বক্তব্য দেন। নোভের ছিলেন কোরিওগ্রাফার। নৃত্য বিষয়ে পড়াশোনা ও অনুশীলন শেষ করে ১৭৪৩ সালে তিনি ‍‍`পারি ওপেরা কোমিক‍‍`-এ শিল্পী হিসেবে যোগ দেন।

পরের কয়েকটি বছরে তিনি বার্লিন, ড্রেসডেন ও স্ট্রসবুর্গে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন। স্ট্রসবুর্গেই ভাবী স্ত্রী ও অভিনেত্রী মার্গারেট সোভারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর পর মার্সেইতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি চলে যান লিওঁ নগরীতে। সেখানে তিনি তার প্রথম দিককার ব্যালেগুলোর কোরিওগ্রাফি করেন। এর পর তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যালে প্রদর্শন করেন।

 
তিনি ভাবতেন নৃত্য অত্যন্ত জটিল একটি ব্যাপার। ছবি ও রঙের মতো। চিত্রকর্মের বিচিত্র রূপের সঙ্গে নৃত্যের বিন্যাস ঘটে। পরে এর প্রকাশভঙ্গি আলোর সমকক্ষ চিন্তা করা যেতে পারে। সংগীত ব্যতীত নৃত্য বোধগম্য নয়। সৃজনশীল উপায়ে সব দেহটাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং দেহের ছন্দকে মানুষের কাছে তুলে ধরা জরুরি। আর একটা জিনিসের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন, সেটা হলো অভিব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে আত্মার গতিশীল আলোড়ন ফুটে ওঠে মুখমণ্ডলের মাধ্যমে।

অব্যশ্যই একজন নৃত্যশিল্পীকে অন্য দশজন মানুষ অপেক্ষা পৃথক হতে হবে। তাহলেই একজন শিল্পীর রুচি অন্যদের আকর্ষণ করবে। নোভেরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যালের মধ্যে রয়েছে অ্যাডমিটেড অ্যারসেট, লে মোট দ্য হারক্লি, মিড ইট জ্যাসন, দ্য পাস্ট অব হিউম্যান, ডিয়ার লেস অ্যাজামনুন, অ্যাপলস ইট ক্যাম্পপেসপে প্রভৃতি। ১৮১০ সালের ১৯ অক্টোবর নোভেরের প্রয়াণ ঘটে।


এডিএস/

আর্কাইভ