প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম
রমজান মাস মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ আর বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে মুসলমানরা এ মাসে নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করেন। তবে শুধু ধর্মীয় নয়, পুরো মাস রোজা রাখার পর এর বৈজ্ঞানিক সুফলও অনেক।
স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত খাওয়া হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। রোজা রাখলে মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও প্রোটিন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত রোজা রাখলে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ে; কমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছুই মুখে দেন না। এ সময় যৌন মিলন থেকেও বিরত থাকার নিয়ম রয়েছে। আর এসব নিয়মের কারণে শারীরবৃত্তীয়, জৈব রাসায়নিক, বিপাকীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই। ফলে শরীর অন্য অনেক কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। কিন্তু রোজার সময় উপোস থাকার কারণে শরীর অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। কাজেই রোজা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এটি শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজানের প্রথম কয়েকদিনে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ উভয়ই কমে যায়। এরপর শরীর পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় সাধারণত মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও তীব্র ক্ষুধা লাগার সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে শরীর উপবাসের সময়সূচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে ও পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম নিতে সক্ষম হয়। পাচনতন্ত্র শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাগুলো আরও সক্রিয় করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে শরীরকে আরও পরিষ্কার করে, নতুন কোষ গঠন করে এবং শক্তি জোগায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, রমজান মাসের দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। এ সময় মন-মেজাজ ভালো থাকে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়তে শুরু করে। এ পর্যায়ে শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এক ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। সেখান থেকে সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে শরীর যেন শুদ্ধ হয়ে ওঠে।
আর দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখলে প্রদাহ, প্রো-ইনফ্লেমেটরি সাইটোকাইনস আইএল-১বি, আইএল-১বি, আইএল-৬, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর এ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তাছাড়া শরীরের ওজন, চর্বি, রক্তের গ্লুকোজ, সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ও উদ্বেগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। সেই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হেমাটোলজিক, এন্ডোক্রাইন প্রোফাইল ও জ্ঞানীয় ফাংশনের উন্নতি ঘটে।
চিকিৎসকদের মতে, রোজা রাখার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো যায়, যা স্বাস্থ্যের উন্নতির একটি উপায়। রোজা সব সুস্থ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ। তবে ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কিডনি ও চোখের রোগের মতো বিভিন্ন অসুখে আক্রান্তদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।