প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৬:৩০ পিএম
আমাদের দেহ আসলে অবিশ্বাস্যরকমভাবে জটিল। এতে সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় নানা অঙ্গ যেমন আছে তেমনি আছে কখনোই না ঘুমানো একটি মস্তিষ্ক। আর প্রতিটি সিস্টেমই একটি আরেকটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। কোনো একটা সিস্টেমে সমস্যা হলে অন্য সিস্টেমেও তার প্রভাব পড়ে।
এবং নানা বাহ্যিক লক্ষণে তা স্পষ্ট হয়। এখানে রইল এমন দশটি লক্ষণের বিবরণ যেগুলো দেখলে বুঝতে হবে আপনার দেহের ভেতরে মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়েছে।
১. চুলকানিযুক্ত র্যাশ এবং একাধিক জায়গায় স্ফীতি
বেশিরভাগ ত্বকের অ্যালার্জি একটি বিশেষ জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু যদি আপনার দেহের একাধিক অংশে চুলকানিযুক্ত র্যাশ এবং ফোলা দেখা দেয় তাহলে তা দেহের ভেতরের কোনো সিস্টেমের সমস্যার কারণে হয়েছে। যা শুধু একজন ডাক্তারই সারিয়ে তুলতে পারবেন।
২. ক্ষুধামান্দ্য
ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাওয়া বেশিরভাগ রোগেরই একটি ক্ল্যাসিক লক্ষণ। আর তা যদি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হয় তাহলে তা হতে পারে ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ের লক্ষণ।
৩. মূত্রাশয় এবং অন্ত্রের সমস্যা
হঠাৎ করেই যদি আপনার টয়লেটে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় বা কমে যায় তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের কারণ। বেশি বেশি পেশাব হওয়াটা ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
৪. হাত কাঁপা, স্পষ্ট স্বপ্ন, এবং মাংসপেশির অনিচ্ছাকৃত ভাঁজ
এগুলো হলো পারকিনসনস রোগের লক্ষণ। সুতরাং আপনি যদি হাত কাঁপার কারণে লিখতে না পারেন বা আপনার ঘাড় এবং অন্য কোনো অঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে মাঝেমধ্যেই বেঁকে যায় বা ভাঁজ পড়ে তাহলে দ্রুত কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৫. হঠাৎ মেজাজ-মর্জির পরিবর্তন
নারীরা অনেক সময় তাদের মাসিক ঋতুস্রাবের আগে এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন। এসময় তাদের মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। কিন্তু আপনার যদি কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তা হতে পারে আপনার দেহের ভেতরের কোনো সিস্টেমের মারাত্মক কোনো সমস্যার লক্ষণ।
যাদের অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড বা মূত্র গ্রন্থির পাশে বা ওপরে টিউমার হয়েছে তাদের রক্তে অ্যাড্রেনালিন উচ্চ মাত্রায় বেড়ে গেছে। যার ফলে হার্টের তড়পানি বেড়ে যাওয়া, আগ্রাসী মনোভাব সৃষ্টি এবং নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৬. রাতে ঘুমের মধ্যে উচ্চ আওয়াজে নাক ডাকা
যারা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তারা মূলত স্লিপ অ্যাপনিয়া নামের একটি রোগে আক্রান্ত। এর মানে হলো তাদের শ্বাসনালী ঘুমের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। জিহ্বা পেছনের দিকে চলে যাওয়ার কারণে বা তাদের শ্বাসনালীর কাঠামোগত কোনো সমস্যার কারণে এমনটা হয়।
এই ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য বুকের ওপর ভর দিয়ে বা উপুড় হয়ে শোওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শ্বাসনালী খোলা থাকবে এবং কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। কিন্তু এরপরও যদি নাকডাকার সমস্যা দূর না হয় তাহলে আপনার অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
৭. ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করা
অনেক সময় অচেতনভাবেই দাঁত কিড়মিড় করতে পারেন কেউ কেউ। একে বলে ব্রুক্সিজম। আর সাধারণত এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত লোকের পাশে ঘুমালে আপনিও এমনটা করতে পারেন। অথবা পেছনের দাঁতে তীব্র সংবেদনশীলতা থাকলেও এমনটা ঘটতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা হতে পারে মানসিক স্ট্রেস বা অবসাদের কারণে। ফলে মানসিক চাপ দূর হয়ে গেলে এই সমস্যাও আর থাকে না।
কিন্তু অনেক সময় আপনার চোয়াল এতে অভ্যস্থ হয়ে পড়তে পারে। এমনকি মানসিক চাপ না থাকা অবস্থায়ও। তখন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এমন অভ্যাস-ভাঙ্গার জন্য দাঁতের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হতে পারে।
৮. দেহ থেকে নিঃসরিত কোনো তরলের মধ্যে রক্ত
কফ, পেশাব, বুকের দুধ, বা পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত বের হয় তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ দেহের কোনো তরলের সঙ্গে রক্ত যাওয়াটা দেহের ভেতরের মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ।
৯. খাবার খাওয়ার পর নিয়মিতভাবে পাকস্থলিতে এসিড উদগীরণ
আপনার যদি প্রায়ই খাবার খাওয়ার পর পাকস্থলিতে এসিডের উদগীরণ হয় এবং বুক ও গলা জ্বালাপোড়া করে তাহলে আপনি হয়তো জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ নামের রোগে আক্রান্ত।
আর বেশিরভাগ সময়ই মশলাদার এবং ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। তথাপি অনেক সময় একদমই ভিন্ন কোনো কারণে এই রোগ হতে পারে। সুতরাং দীর্ঘদিন ধরে এসিডিটির সমস্যা হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১০. চোখ, ত্বক এবং জিহ্বায় হলুদ আভা
আপনার চোখ, জিহ্বা, ত্বক এবং হাতের তালুতে হলুদাভ ছোপ পড়লে বুঝতে হবে আপনার জন্ডিস হয়েছে। লিভারের সমস্যার কারণে এমনটা হয়। সুতরাং এমন সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে যান।