• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

নগরবাড়ি ঘাটে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ; আহত ১৫

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম

নগরবাড়ি ঘাটে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ; আহত ১৫

সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল। আহতরা হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার বিকেলে পাবনার নগরবাড়ি ঘাট ও পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি।

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে বেড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়কসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত চারজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।  

বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু ও বেড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রাজ্জাক ফকির গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে, হামলার দায় অস্বীকার করে পরস্পরকে দুষছে উভয়পক্ষ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরবাড়ি ঘাটের ইজারাদার দুইজন। শুল্ক আদায়কারী ইজারাদার হলেন বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এম এ আব্দুল গনি ফকির। আর লেবার হ্যান্ডেলিং ইজারাদার হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু। তাদের দু’জনের মধ্যে গণি ফকির পাবনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ একেএম সেলিম রেজা হাবিব গ্রুপ সমর্থক। আর শরিফুল ইসলাম মিন্টু কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি ও এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান জাফির তুহিন গ্রুপ সমর্থক।

নগরবাড়ি ঘাটে ইজারার বাইরে শ্রমিকদের একটি অলিখিত সমিতি আছে। স্থানীয়ভাবে দালাল সমিতির নামে পরিচিত। শ্রমিকরা ব্যবসায়ীদের বা মালিকদের কাছে ট্রাক বন্দোবস্ত করে দেয়ার মাধ্যমে ট্রাক প্রতি বিভিন্ন অংকের চাঁদা নেন। ছয় চাকার ট্রাক ৩১০ টাকা, দশ চাকার ট্রাক ৪১০ টাকা করে চাঁদা নেন শ্রমিকরা।

কথিত এই শ্রমিক সমিতির চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা আর নগরবাড়ি ঘাটের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মিন্টু আর রাজ্জাক ফকির গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। সোমবার সকালে কথা কাটাকাটি থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত গণি ফকিরের ভাতিজা বেড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রাজ্জাক ফকির বলেন, ‍‍`নগরবাড়ি ঘাটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন আমাদের এক কর্মী কোবাদ হোসেন নামের একজন। সোমবার সকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম মিন্টু ও মফির নেতৃত্বে তাদের সমর্থকেরা ওই দোকান দখল করতে গেলে আমরা বাঁধা দেই। তখনই সংঘর্ষ বাঁধে।‍‍`

তিনি অভিযোগ করেন, শরিফুল ইসলাম মিন্টু আগে আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে মিশে থেকে নগরবাড়ি ঘাটের সুফল ভোগ করেছেন। ৫ আগস্টের পর নতুন করে বিএনপিতে ভিড়েছেন। বালু কাটা, চর দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজীর সাথে জড়িত। মালিক সমিতির দোহাই দিয়ে তারা শ্রমিকদের মাধ্যমে ট্রাক প্রতি চাঁদাবাজী শুরু করেছে। আমরা এটা প্রতিহত করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি।

আহত কোবাদ হোসেন বলেন, ‍‍`নগরবাড়ি ঘাটে স্থানীয় এক মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী সুষমা রায়ের একটি দোকান কিনেছি ২ লাখ টাকায়। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। আর ৮০ হাজার টাকা পাবে। আজকে শুনি শরিফুল ইসলাম মিন্টু আর মফি নাকি আগেই ওই দোকান কিনেছে। আজকে হঠাৎ করেই মিন্টু আর মফি বাহিনী আমার দোকান দখল করতে হামলা চালায়। তখন আমরা বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে।‍‍`

বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‍‍`তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। বরং শ্রমিক সমিতি বা দালাল সমিতির কাছে রাজ্জাক ফকির গ্রুপ চাঁদার ভাগ চাইলে শ্রমিকরা দিতে অস্বীকার করে। এছাড়া তারা শ্রমিকদের মধ্যে জোর করে তাদের লোকজন ঢুকাতে চেয়েছিল। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব। সকালে তারা অস্ত্র নিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। তখন শ্রমিকরাও একজোট হয়ে নিজেদের লোকজন নিয়ে তাদের প্রতিহত করলে সংঘর্ষ বাঁধে। আর আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে সংঘর্ষ থামিয়ে দেই।‍‍`

এদিকে কথিত ওই দালাল সমিতির কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‍‍`মুলত মারামারি হলো ঘাট কেন্দ্রিক ঝামেলা। দালাল সমিতির যে পয়সাটা ওঠে সেই টাকাটা মাসিক কে কত নেবে এই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। একজন বলছে আমাকে ২০ ভাগ দাও, আরেকজন বলছে আমাকে ৩০ ভাগ দাও। এটাই মুল কাহিনী। দালাল সমিতির শ্রমিক সংখ্যা ৫০ থেকে ৫২ জন।‍‍`

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আলমগীর হোসেন জানান, ‍‍`খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুনেছি, একটা দোকান দখল করা নিয়ে ঝামেলা। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।‍‍`

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ