প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২১, ০৩:২৭ পিএম
শীত এলেই প্রকৃতি
বদলে যায়। গাছের পাতা
ঝরে, নদীতে আসে স্থবিরতা। প্রকৃতির
সেই প্রভাব পড়ে মানুষের উপরও।
পাতা ঝরা দিনগুলো রুক্ষতার
ছাপ ফেলে যায় ত্বকে।
ঠোঁট ফেটে যায়, পায়ের
গোড়ালি থেকে চামড়া উঠতে
থাকে, চুল ভরে ওঠে
খুশকিতে। তবে কিছু নিয়ম
মেনে চললেই রুক্ষতার দিনেও কোমল ও স্নিগ্ধ
থাকবে শরীর ও মন।
মুখের
যত্ন : যারা সারা দিন
বাইরে কাজ করেন, তাদের
ত্বকে গাড়ির ধোঁয়া ধুলোবালু ইত্যাদি জমা হয়। সন্ধ্যা
বা রাতে বাড়ি ফেরার
পর সারা দিনের জমে
থাকা ময়লা এবং ব্যবহৃত
মেকআপ ভালো করে ত্বক
থেকে উঠিয়ে নেয়া জরুরি। অস্বাভাবিক
পরিবেশ দূষণে মুখে ধুলোবালু জমা
হয়। ত্বক থেকে ময়লা
তুলে না ফেললে ত্বকের
ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
ত্বক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারবে না।
যার ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস
বা কালো কালো দাগসহ
ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শীতের
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক
পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন।
এজন্য প্রথমে অলিভ অয়েল বা
বেবি অয়েল দিয়ে মুখ
ভালো করে ম্যাসাজ করে
নিতে হবে। এরপর কুসুম
গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখটা
মুছে ফেলুন। পরে ভালো কোনো
ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে
নিন। ঘুমন্ত অবস্থায় মেটাবলিজমও কম হয়, ত্বক
থাকে অনেক আরামে। তাছাড়া
৭-৮ ঘণ্টা টানা
ঘুমানোর কারণে ক্রিম কার্যকর হওয়ার মতো সময় পায়।
তাই ঘুমানোর আগে ভালো মানের
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তবে দিনের কাজের
মাঝে সময় করে নিয়ে
দু-একবার মুখ পরিষ্কার করে
রাখলে ভালো হয়।
হাত
ও পায়ের যত্ন : গোসলের পর ও ঘুমাতে
যাওয়ার আগে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার
ব্যবহার করলে ত্বক কোমল
থাকে। এছাড়া সমপরিমাণ গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়েও
লাগাতে পারেন। হাতের ত্বক খসখসে হয়ে
গেলে লেবুর রসে এক চামচ
মধু ও চিনি মিশিয়ে
ঘষুন যতক্ষণ না পর্যন্ত চিনি
গলে যায়। এরপর পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কনুইয়ের
কালো দাগ দূর করতে
এটি বেশ কার্যকর।
শীতকালে
পা ফাটার প্রবণতা কম-বেশি সবারই
দেখা দেয়। গোড়ালি সব
সময় পরিষ্কার রাখলে এ সমস্যা থেকে
মুক্তি মিলতে পারে অনেকটাই। গোসলের
সময় ঝামা পাথর দিয়ে
গোড়ালি আলতো করে ঘষে
পায়ের মরা চামড়া তুলে
ফেলুন। তারপর পা মুছে গ্লিসারিন
অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান।
সারা
দিন রোদ ও ধুলো
ময়লায় হাত ও পায়ের
অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে
যায়। কিন্তু খুব সহজেই দিন
শেষে রাতে মাত্র ২০
মিনিট ব্যয় করে হাত
ও পায়ে ফিরিয়ে আনতে
পারেন হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ও কোমলতা। একটি
তাজা লেবু কেটে হাত
ও পায়ে ঘষে নিন।
এরপর কুসুম গরম পানিতে লিটারে
১ চা চামচ লবণ
দিয়ে এতে হাত ও
পা ডুবিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট।
চাইলে পানিতে সামান্য শ্যাম্পুও দিতে পারেন। একটি
মাজুনি দিয়ে আলতো করে
হাত ও পা ঘষে
নিন। এরপর হালকা কুসুম
গরম পানিতে হাত পা ধুয়ে
নিন। ত্বক মুছে হাতে
ও পায়ে অলিভ অয়েল
লাগিয়ে নিন। এটা করুন
সপ্তাহে দুই দিন।
ঠোঁটের
যত্ন : ঠাণ্ডা বাতাসে ঠোঁট ফেটে যায়।
কখনও কখনও ফেটে গিয়ে
রক্ত বের হয়। কুসুম
গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে
তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর
গ্লিসারিন/ভ্যাসলিন লাগান। ঠোঁট কালচে হয়ে
গেলে দুধের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে
পারেন। কখনই জিভ দিয়ে
ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। তবে
ঠোঁট শুকনো রাখা যাবে না।
শুকানোর আগেই গ্লিসারিন অথবা
ভ্যাসলিন লাগান।
চুলের
যত্ন : শীতে খুশকির উপদ্রব
বেড়ে যায়। খুশকি থেকে
মুক্তি পেতে সপ্তাহে অন্তত
দুই দিন কুসুম গরম
নারকেল তেলের সঙ্গে ১ চা চামচ
লেবুর রস মিশিয়ে মাথার
তালুতে লাগান। লেবুর রসের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি
উপাদন ত্বককে খুশকি মুক্ত করে। ১ ঘণ্টা
পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত
সপ্তাহে দু-তিনবার কিটোকোনাজল
শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
২.৫-৩ লিটার
পানি পান করুন প্রতিদিন।
প্রচুর ফল ও শাকসবজি
খান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিমিত ও নিয়মিত আহার
ও ঘুম, শারীরিক ব্যায়াম,
বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত।
তারিক/এম. জামান