প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৯:৫১ এএম
কালোজিরায় ১০০টিরও বেশি
উপযোগী উপাদান আছে। এতে আছে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ, ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ
তেল ও চর্বি। কালোজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী
তেল।
এতে আরও আছে আমিষ, শর্করা
ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। পাশাপাশি কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড,
অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, টাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ,
ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি।
এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট,
লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান। এতে রয়েছে ক্যান্সার
প্রতিরোধক ক্যারোটিন। কালোজিরা থেকে যেসব রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় তা হলো– লিনোলিক,
অলিক, স্টিয়ারিক, লিনোলিনিক, এসিড, প্রোটিন, নিজেলোন, গ্লুটামিক এসিড।
এ ছাড়াও রয়েছে নিজেলিন,
পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়রন,
জিংক।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং
উপকারিতা : আমাদের আধুনিক ডাক্তারি শাস্ত্র আর ধর্মীয় অনুভূতি যাই বলি না কেন কালোজিরা
সবখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। নিমকি বা কিছু তেলে ভাজা খাবারে ভিন্নধর্মী স্বাদ আনতে এটি
বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়া অনেকেই কালোজিরার
ভর্তা খেয়ে থাকেন। কিন্তু কালোজিরার ব্যবহার খাবারে একটু ভিন্নধর্মী স্বাদ আনাতেই সীমাবদ্ধ
নয়। আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজি চিকিৎসায় কালোজিরার অনেক ব্যবহার হয়।
কালোজিরার বীজ থেকে তেল
পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। নানাবিধ ক্ষেত্রে কালোজিরা বা কালোজিরার
তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এসব ক্ষেত্রসমূহের কিছু
উল্লেখ করা হলো-
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি : এক
চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরা
তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খাবেন। যা আপনার দুশ্চিন্তা দূর করবে।
এ ছাড়া এটি মেধা বিকাশের
জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক।
মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
মাথাব্যথা নিরাময়ে : ১/২
চা চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ
মধুসহ দিনে তিনবার করে দু-তিন সপ্তাহ খেলে মাথা ব্যথায় উপকার পাবেন।
সর্দি সারাতে : এক চা চামচ
কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার খেতে হবে
এবং মাথায় ও ঘাড়ে রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে হবে।
এ ছাড়া এক চা-চামচ কালোজিরার
তেলের সঙ্গে দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর
হবে। সর্দি বসে গেলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন।
একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার
কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুঁকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরও দ্রুত ফল পেতে
বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করুন।
বাতের ব্যথা দূরীকরণে :
আক্রান্ত স্থানে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন। উপকার পাবেন। এক
চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ কালোজিরা ও সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দৈনিক তিনবার
করে দু-তিন সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
হার্টের বিভিন্ন সমস্যার
ক্ষেত্রে : এক চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক দুইবার করে
চার-পাঁচ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে
রাখতে : প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল
মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার
তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে দু-তিন দিন খেলে ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এ ছাড়া কালোজিরা বা কালোজিরার
তেল বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি
করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
পাইলস সমস্যা নিরাময়ে :
এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেলসহ প্রতিদিন খালি পেটে
তিন-চার সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ
সারাতে : যারা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক
বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত
সমস্যা উপশম করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া রং চা বা গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক দুইবার করে খেলে উপকার পাবেন।
যৌন সমস্যা সমাধান করে : কালোজিরা নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং যৌন সমস্যা প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কালোজিরা খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে।
এক চা চামচ মাখন, এক চা
চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরা ও মধুসহ দৈনিক তিনবার চার-পাঁচ সপ্তাহ খেলে উপকার
পাবেন।
অনিয়মিত মাসিক সমস্যায়
: এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার
তেল মিশিয়ে দৈনিক তিনবার করে খেলে কার্যকারিতা বুঝতে পারবেন।
বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে
: যেসব মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার
আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন।
মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের
প্রবাহ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে
পারেন। এ ছাড়া এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক তিনবার করে নিয়মিত খাবেন,
যা শতভাগ কার্যকরী।
আমাশয় নিরাময়ে : আমাশয়
রোগের চিকিৎসা করতে কালোজিরার ব্যবহার অনেক পুরনো। এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ
মধুসহ দিনে তিনবার করে দু-তিন সপ্তাহ খাবেন।
তারিক/এম. জামান