প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২১, ০৪:১৬ পিএম
ভারতের ওষুধের দোকানে দিনে দিনে নির্দিষ্ট
কিছু ওষুধের বিক্রি বেড়েই চলেছে। এতে করে উদ্বেগও
বাড়ছে। কেননা এটি যৌনবর্ধক ওষুধ।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তরুণেরা
ক্রমেই ভায়াগ্রা ধরনের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে
পড়ছে। করোনাভাইরাসের সময় এ ধরনের
ওষুধ বিক্রি আরও বেশি বেড়েছে।
প্রায়
প্রতিদিন কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য শহরে বিক্রি হচ্ছে
গাদা গাদা যৌন বলবর্ধক
ওষুধ। যার প্রচলিত নামে
‘ভায়াগ্রা’। প্রকৃত ভায়াগ্রা আমেরিকার ফাইজার কোম্পানির তৈরি একটি ওষুধ।
যার মূল্য অনেক বেশি। এ
ওষুধে থাকা যৌগটির নাম
‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’। তবে ভারতে
তৈরি ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ গোত্রের ওষুধের দাম তুলনায় অনেক
কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে
আসল ভায়াগ্রার ১০ ভাগের এক
ভাগও নয়। আর তাতেই
নির্দ্বিধায় এই ওষুধের দিকে
ছুটছে একটা প্রজন্মের পুরুষ।
‘অল ইন্ডিয়া অর্গানাইজেশন
অব কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস’
বা ‘এআইওসিডি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
২০১০ সাল থেকে এখন
পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি
বেড়েছে যৌন বলবর্ধক ওষুধের
বিক্রি। ২০১০ সালে ভারতে
এ ধরনের ওষুধের বাজারের আয়তন ছিল প্রায়
১৮০ কোটি টাকা। ২০১৮
সালেই তা বেড়ে দাঁড়ায়
৩৫৭ কোটি টাকায়। আর
সেখান থেকেই চিকিৎসকদের অভিমত, গোটা প্রজন্মের পুরুষ
অন্য এক মহামারির সামনে
এসে দাঁড়িয়েছে। যার নাম ভায়াগ্রা।
‘ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ বা
‘আইএমএ’-এর
সাবেক প্রধান কেকে অগ্রবাল মুম্বইয়ের
জানিয়েছেন, “বহু রোগীই চান
চিকিৎসকেরা তাদের ‘ভায়াগ্রা’ গোত্রের ওষুধ দিন। কিন্তু
সেটি প্রেসক্রিপশনে লেখা হোক তা
তারা চান না। কারণ
তাতে কাছের মানুষের কাছে সেসব রোগীর
সম্মানহানির আশঙ্কা থাকে। তারা দোকান থেকে
এমনিই কিনে নেন এজাতীয়
ওষুধ।”
বহু ক্ষেত্রেই ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ গোত্রের ওষুধ কিনতে কোনো
প্রেসক্রিপশন লাগে না। চেনা
দোকানে গিয়ে বললেই হয়।
অথবা কাচের ওপর অদৃশ্য ‘ভি’ অক্ষর
লেখার মতো আরও হাজারও
ইশারা তো আছেই।
এজাতীয়
ওষুধের বিক্রির জন্য মনোবিদরা মূলত
দায়ী করছেন মানসিক চাপকে। মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘উদ্বেগ,
অবসাদ এবং মানসিক চাপ
বাড়লে তার প্রভাব পড়ে
যৌন স্বাস্থ্যে। অনেকে সেই মানসিক চাপ
কাটাতে অন্য এক ধরনের
ওষুধ খান। তার প্রভাবেও
যৌন অক্ষমতা বাড়তে থাকে।’ এর ফলে পুরুষের
বন্ধ্যত্ব, সঙ্গমকালে আকর্ষণ বোধ না করা
এবং যৌনাঙ্গের শিথিলতার মতো সমস্যা বাড়ে।
চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ইরেকটাইল
ডিসফাংশন’। আর এ ধরনের
সমস্যা যত বাড়ছে, ততই
বাড়ছে ‘ভায়াগ্রা’ গোত্রের ওষুধের বিক্রি। করোনাকালে তা আরও বেড়েছে।
কারণ এই সময়ে তীব্রভাবে
বেড়েছে মানসিক চাপ।
ফলে
স্বাস্থ্যের অবস্থাও নাজুক হচ্ছে। নতুন কিছু গবেষণা
বলছে, যারা উচ্চ রক্তচাপের
সমস্যায় ভোগেন, ভায়াগ্রা বা ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ গোত্রের
ওষুধ তাদের হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। কিছু
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া ভায়াগ্রার তেমন কোনো ক্ষতিকারক
দিকও এখন পর্যন্ত টের
পাওয়া যায়নি। এর ফলে রক্তচাপ
কিছুটা কমে যায়। তাই
মদপানের পর এজাতীয় ওষুধ
খেলে শরীর খারাপ হতে
পারে। এ তো গেল
তাৎক্ষণিক বিষয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন এজাতীয় ওষুধ
খেয়ে গেলে, যৌন সম্পর্কের চরম
অবনতি হতে পারে বলে
আশঙ্কা চিকিৎসকদের। এমন নির্ভরতা তৈরি
হতে পারে, যাতে এই ওষুধ
ছাড়া সঙ্গম আর হয়তো সম্ভবই
হবে না অনেকের ক্ষেত্রে।
‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ বিক্রি যে হারে বাড়ছে,
তাতে গোটা প্রজন্মের পুরুষের
সঙ্গে এমন হতে পারে
বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
শামীম/সবুজ/এম. জামান